সকল মেনু

বঙ্গবন্ধু প্রেমে ১৫ আগস্ট সন্তানের জন্ম পেছালেন বাবা

baby প্রথম সন্তান জন্ম নেবে। চিকিৎসক তারিখ দিলেন ১৫ আগস্ট। কিন্তু বঙ্গবন্ধুপ্রেমী বাবা ভাবলেন, জাতির জনককে হত্যার দিন মেয়ের জন্মদিন পালন করতে হবে- এ কেমন কথা। ছুটে গেলেন চিকিৎসকের কাছে। বললেন, একদিন পেছানো যায় কি না। নিজের মনের কথা খুলে বললেন স্ত্রীকেও। স্বামীর বঙ্গবন্ধু প্রেমের কথা অজানা ছিল না জীবনসঙ্গীর। বললেন, কষ্ট হলেও সইতে পারবেন তিনি।

কিন্তু বেঁকে বসলেন চিকিৎসক। বললেন ঝুঁকি আছে। কিন্তু গো ধরলেন শিশুটির বাবা-মা। পরে রাজি হলেন চিকিৎসক। আর মাকে রাখলেন নিজের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে। আর ১৬ আগস্ট জন্ম নিল ফুটফুটে মেয়ে শিশু।

চার বছর আগে ২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছিল। এর চার বছর পর ঘটনাটি প্রকাশ করেছেন বাবা।

দেখতে দেখতে শিশুটির বয়স চার হয়ে গেলো। তার শিশুটির নাম রাখা হয়েছে হুজাইমা বিনতে হুরায়রা। তার বাবা মোহাম্মদ আবু হুরায়রা ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটির (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিসনেজ এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি) সহকারী অধ্যাপক। শিশুটির মা শামসুন্নাহার রিনু দুই সন্তানকে দেখাশোনা করেন।

dhakaএই বাংলার মাটি, মানুষকে ভালোবেসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দিয়েছেন অনেক কিছুই। জবাবে পেয়েছেন মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে আজও তার জন্য চোখের জল ফেলে মানুষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনককে হত্যার পর বিরুদ্ধ পরিবেশে নানাভাবে প্রকাশ করেছেন শোক, ক্ষোভ।

বিচার না হওয়া পর্যন্ত ভাত না খাওয়া, পায়ে জুতা না পড়া বা বিষয়ে না করার মত পণ করেছেন বহু মানুষ। এবার জানা গেলো সন্তানের জন্ম পিছিয়ে দেয়ার মত ঘটনা।

ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো- জানতে চাইলে আবু হুরায়রা বলেন, ‘২০১২ সালে আমার স্ত্রীর প্রথম সন্তানের সিজারিয়ান এর তারিখ ছিল ২২ আগস্ট। রুটিন চেকআপ করার জন্য ১২ বা ১৩ তারিখ গেলাম চিকিৎসকের কাছে। উনি বললেন স্ত্রীকে এখনি ভর্তি করতে হবে, কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে ফেললাম। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ম্যাডাম বললেন, ‘১৫ তারিখ সকালে সিজার হবে। আমি বললাম একদিন পেছানো যায় কি না।’

‘কেন?’ কারণ জানতে চান চিকিৎসক যোবায়দা সুলতানা। আবু হুরায়রা বললেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস। তিনি চান না এই দিন তার সন্তান জন্ম নিক।

চিকিৎসক কী বলছেন- জানতে চাইলে আবু হুরায়রা বলেন, ‘তিনি বললেন, আপনি তো শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন আধুনিক মানুষ; আপনার কাছে এইরকম আশা করিনি।’

কিন্তু অনড় ছিলেন হুরায়রা, বললেন, ‘আপনি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন।’ এর আগেই স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন ‍হুরায়রা। জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধার কমতি নেই তার জীবনসঙ্গী রিনুরও। স্বামীর আবেগ অনুভূতির কথাও জানতেন তিনি। প্রথম সন্তানের জন্মের ঝুঁকি মেনে নিয়েছিলেন তিনি এ কারণেই। চিকিৎসককে রিনু বললেন, সন্তানের জন্ম একদিন পিছিয়ে দিতে প্রস্তুত তিনি।

পুরোটা সময় এই দম্পতির পাশে ছিলেন হুরায়রার মা খালেদা ফেন্সি। প্রথম নাতনি জন্ম নেবে। হাসপাতালে ছুটি এসেছিলেন তিনি। ছেলে যখন নাতনির জন্ম একদিন পিছিয়ে দেয়ার কথা বললেন, তখন এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। হুরায়রা বলেন, ‘আম্মা আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট দিল। হবে না কেন, তিনিও তো বঙ্গবন্ধুর অনুসারীই। এই নেতার কথা তো পরিবার থেকেই প্রথম জেনেছি।’

গোটা পরিবারের এই অনড় অবস্থান দেখে চিকিৎসক যোবায়দা সুলতানা রাজি হলেন। আর মা শামসুন্নাহার রিনুকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাধানে রাখলেন। ‘আমি ওনার (চিকিৎসক) কাছে কৃতজ্ঞ। দিনভর তিনি খোঁজ রেখেছেন আমার স্ত্রীর দিকে। কমপক্ষে চারবার পর্যবেক্ষণ করে গেছেন’-বলেন আবু হুরায়রা।

হুরায়রার সেই মেয়ে এখন কথা বলে পুরোপুরি। তাকেও বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন বাবা। বলেন, উদ্বুদ্ধ করেন মহান এই নেতার জীবনাদর্শ শেখানোর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top