সকল মেনু

মানুষের ঢল: সব পথ মিলেছে ৩২ নম্বর

1471275893_42

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের চারপাশ তাকালে শুধু মানুষ আর ‍মানুষ। শোকের এই দিনে সব মানুষের পথ এসে মিলেছে এই ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে মানুষের এই মিলনমেলায় পা ফেলার জায়গা নেই। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কিংবা বৃদ্ধ সবাই এসেছেন শ্রদ্ধা জানাতে। বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে হাতে নিয়েছেন ফুল ও কালো পতাকা। আছে পুস্পস্তবকও। সোমবার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পথ ধরে মুজিব স্মরণে হাজারো শোকার্ত মানুষ তাদের যাত্রা শুরু করেন ধানমণ্ডির এই ৩২ নম্বরের দিকে, বঙ্গবন্ধু ভবনে। এক চল্লিশ বছর আগে যেখানে থাকতেন, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ মানুষটি নেই, সেখানে আছে তার প্রতিকৃতি। সেই প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে যদি জনক হারানোর শোক খানিকটা লাঘব হয়-এই অনুভূতি থেকে। আজ সোমবার ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর ৪১ তম বার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে শোক, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় পুরোজাতি বিনম্র চিত্তে স্মরণ করে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

দিনের প্রথম প্রহরে ভোর সাড়ে ৬টায় জনকের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এর পর শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া এবং প্রধান বিচারপতি সুদির কুমার (এসকে সিনহা) জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে যান। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে ঘাতকদের গুলিতে বঙ্গবন্ধুর প্রাণহীন দেহ পড়েছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। ওই স্থানটিতে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে শাহাদাত বরণকারী বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করেন। সেখানে ঘুরে ঘুরে তার বাবার স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখেন।

প্রায় আধাঘণ্টা বঙ্গবন্ধু ভবনে অবস্থান শেষে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে গিয়ে তার পরিবারের অন্য সদস্য ও স্বজনসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্প অর্পণ করেন। কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। এখানেও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবরস্থান মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান।

এদিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই জাতির জনকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ও আশপাশের রাস্তায় জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে জড়ো হওয়া মানুষের ভিড় বঙ্গবন্ধু ভবনের আশপাশ পেরিয়ে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিটি।

দিবসটি উপলক্ষে ছিল সরকারি ছুটির দিনও। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করে। সংবাদপত্রগুলো শোক দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করে বিশেষ অনুষ্ঠান।

দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর অলিগলিতে মাইকে বাজছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান ও কবিতা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণামূলক গানও চলছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লাগুলোতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মোনাজাত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো। সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top