সকল মেনু

খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়াসহ নানা অভিযোগ

unnamed (8) বোয়ালমারী (ফরিদপুর) সংবাদদাতাঃ বোয়ালমারী উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার (ওসিএলএসডি) বিরুদ্ধে চেকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ (পনের) লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আঞ্চলিক ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোককারীরা এ বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ বছর ধান ক্রয়েও ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বাজারের এক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে মোটা অংকের ঘুষের টাকা গ্রহন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অবশ্য খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ ও ১৫ লাখ টাকার চেক নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২ জুলাই বোয়ালমারী উপজেলা সদর বাজারের ‘বিশ্বাস ট্রেডার্স’ এর মালিক তৈয়ব বিশ্বাস সোনালী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার তার নিজস্ব হিসাব নম্বর ৩৩০০২০২১ থেকে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক যার নম্বর ৭৭৩৪৩৩৮ বোয়ালমারী উপজেলার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফখরুল ইসলামের নামে ইস্যু করেন। ৭ জুলাই ফখরুল ইসলাম চেকটি ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ফখরুল ইসলাম বোয়ালমারী উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান ক্রয় না করে তিনি ঘুষ নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত কয়েক ব্যক্তির নিকট থেকে গম ও ধান ক্রয় করেছেন। খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নিয়ম মোতাবেক ধান কিনে চাল তৈরীর কথা থাকলেও তিনি ভাল মানের (ইরি-২৮, ২৯) ধান কিনে চাল তৈরী না করে ধান বিক্রি করে নিুমানের মোটা চাল কিনেছেন। এতে তিনি প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ব্যবসায়ী দাউদুজ্জামান ও মো. আকরাম হোসেন বলেন, মো. ফখরুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ (পদায়ন ০৮ জানুয়ারী ২০১৫) বোয়ালমারীতে যোগদানের পর থেকে নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বোয়ালমারী খাদ্য গুদামটিকে গিলে খাচ্ছে। ২০১৫  সালে কৃষকদের নিকট থেকে দুই দফায় প্রায় ২ হাজার দুই’শ মিেট্রক টন গম ক্রয়ের বরাদ্দ পায় বোয়ালমারী খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। ফখরুল ইসলাম কৃষকদের কাছ থেকে ওই গম ক্রয় না করে কয়েকজন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে গম ক্রয় করে বিপুল পরিমান টাকা হস্তগত করেছেন। ওই ১৫ লাখ টাকা তারই অংশ।

unnamed (9)

সোনালী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক একেএম নুরুল আলম বলেন, লেনদেনের বিষয়টি সত্য তবে তিনি এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানান।
খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্বচ্ছতার সাথে কাজ করেছেন। ঘুষ দুর্নীতি বা কোন প্রকার অনিয়মের কথা তিনি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন বিশ্বাস ট্রেডার্সের মালিক তৈয়ব বিশ্বাসের কাছ থেকে চেকের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন বাজারের কিছু ব্যবসায়ীর নিকট থেকে আমি গম বা ধান ক্রয় না করার কারণে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তবে এ ব্যাপারে বিশ্বাস ট্রেডার্সের মালিক তৈয়ব বিশ্বাস খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফখরুল ইসলামকে চেকের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ওই টাকা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে তার কাছে পাঁচটি কিস্তিতে জমা রেখেছিলেন। তিনি সেই টাকার জামিনদার ছিলেন মাত্র। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার টাকাটাই আমি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা মুন্সী মুজিবুর রহমান বলেন, ফখরুল ইসলাম তাকে ঠিকমত মান্য করেনা। সে তার মত করে কাজ করে। তাকে পরিবর্তন করার জন্য উপরে বলেও কোন কাজ হয়নি।
ধান চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. খায়রুজ্জামান বলেন, চেক নেওয়াসহ ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি। সর্বশেষ ধান ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা খ্যদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউএনও ধান চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি হলেও ওসিএলএসডি ফখরুল ইসলাম ইউএনওকে উপেক্ষা করে এ সব কাজ করতেন। এ সকল বিষয়গুলি তিনি তদন্ত করে দেখবেন।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্র নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বোয়ালমারীর ওসিএলএসডি ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। খুব শ্রিগ্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে তার বিরুদ্ধে (ফকরুল ইসলাম) আনিত অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে ঢাকার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.ফজলুর রহমান অভিযোগপত্র হাতে পাওয়া প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা খাদ্র নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান আমাকে ফোনে ওসিএলএসডি ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়মের কথা ফোনে জানিয়েছেন। তিনি ওসি এলএসডি ফখরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত স্বেচ্ছায় বদলির আবেদনপত্র ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে পেয়েছেন। অতি শিগ্রই তাকে বোয়ালমারী থেকে
প্রত্যাহার করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top