সকল মেনু

স্মৃতি কথা পর্ব ২: মুজিবের ছিলো সততা আর অসীম সাহস আমাদের সেটা ছিলো না

3251_বঙ্গবন্ধুদেশ ভাগ হয়ে গেছে।  আমরা তখোন কলকাতা থেকে ঢাকায়। ভর্তি হয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। থাকি পুরান ঢাকার একটি বাড়িতে। মেসের মত করে কয়েকজন মিলে। বাড়িটি ছিলো পরবর্তী কালে ঢাকার মেয়র মোহাম্মাদ হানিফদের। নিয়মিত ক্লাশ বা পড়াশোনার চেয়ে শেখ মুজিবের মন এবং ঝোক ছিলো রাজনীতি এবং আন্দোলনের দিকে। আমার কথা ভিন্ন। নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। পবিারের আয়ের উৎস কৃষিই প্রধান। সেই কলকাতা থাকতে ও এমনকি ঢাকায় এসেও আমার খেয়াল ছিলো নিয়মিত ক্লাস এবং পড়াশোনা। কারনটা সোজা। ওইযে পিছু টান। বাবার কষ্টের টাকা খরচ করে পড়ছি ,একটা কিছু করতে হবে,কেবল নেতাগিরিতে আমাদের চলবে না। সে কারনে অত সাহস প্রদর্শন বা ঝুকি নেয়ার অবস্থা আমাদের ছিলো না। শেখ মুজিবের আবার ও সবের বালাই ছিলো না। কোন কিছুতেই তারঁ কোন দিন পিছু টান দেখেনি। যখন যা বুঝেছে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। অদম্য সাহসে এগিয়ে গেছে। আজকে বুঝি ওই অসীম সাহস আর সততা নিয়ে প্রতবাদী হয়ে সামনে ঝাপিয়ে পড়াই শেখ মুজিবকে জাতির নেতা বানিয়েছে। মানুষ তাকে তাদের আপন করে নিয়েছে। বলতে গেলে কি শেখ মুজিব আমাদের চেয়ে খারাপ ছাত্র ছিলো না বরং অনেক ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে তার মেধার পরিচয় বেশী পেয়েছি। কিন্ত সমস্যা ছিলো শেখ মুজিব কখনোই আমাদের মত ছকে বাধা পড়াশোনা করেনি।
কথা গুলো বলছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবনের বন্ধু, তারঁ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহচর,বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে ছিলেন এমন লোকদের সাথে কথা বলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাদের স্মৃতি সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিই কয়েক বছর আগে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বঙ্গবন্ধুর ওই সকল কাছের লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্প্রতি প্রায়াত সুপ্রীম কোটের প্রখ্যাত আইনজীবি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ চৌধুরী ব্যাক্তি জীবনে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বন্ধু। আব্দুল হামিদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর ইউনিয়নের ঠাঙ্গামারী গ্রামে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের হয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমানের আমলে ছিলেন কাতারের রাষ্ট্রদূত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক স্মৃতির কথা বললেন হামিদ চৌধুরী।
আমারা তখোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র। এক বিপদ এসে খাড়া হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের চুতর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা আন্দোলনে নামলো। প্রথম দিকে ছাত্রনেতাদের বেশীর ভাগই আন্দোলনের সমর্থনে দাড়াঁলো। র্ধীরে র্ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর  অবস্থানের দিকে গেলে অনেক ছাত্র নেতাই পিছু হঠলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শেখ মৃুজিব সহ আরো কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার  করলো। বহিস্কারের দলে আমিও ছিলাম । পরে আমি লিখিত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যাই।  কিন্ত মুজিব ক্ষমা চাইলোই না। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি তাকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেরত আসতে কিন্ত হলো না ,মুজিবের একটাই কথা আমি চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন করে কোন অন্যায় করিনি,ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
কি আর বলবো একটা কথা বলতেই হয় ,বলতে পারেন মুজিব ছিলো প্রচন্ড জেদি,একবার যদি কোন বিষয়ে গো ধরতো রে ভাই সেখান থেকে তাকে সরানো ছিলো অসম্ভব। তাকে মনো হতো যেন হিমালয় পর্বতের চেয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।
তার সাহস আরে জিদ দেখেছি, দেশ ভাগের কিছু আগের ঘটনা বলছি,দেশ ভাগ নিয়ে তখোন বিভিন্নস্থানে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে ,কলকাতায় ও ভয়াবহ দাঙ্গা চলছে। সে সময়ে শেখ মুজিবকে দেখেছি বিশাল এক লাঠি হাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িঁয়ে থাকতো দাঙ্গা দমনের জন্য। সে দিন গুলোতে মুজিবের সঙ্গে দাঙ্গা দমনে লাঠি হাতে দেখেছি ছবি বিশ্বাসকে। মুজিব এবং ছবি বিশ্বাস এক সঙ্গে লাঠি হাতে কলকাতা শহরে ঘুরেছে সাম্প্রদায়িক  দাঙ্গা দমন করতে।
আরো কত না স্মৃতি। মনের মাঝে গেথে আছে একটি ঘটনার কথা । মনে পড়ে দুপুর বেলা। ঠিক দুপুর নয় দুপুরের একটু পরে । তখোন আমি এবং  মুজিব পুরান ঢাকায় থাকি। আমি বাসায় ফিরে দেখি মুজিব একা রুমে বসে আছে । তাকে এমন সময় বাসায় দেখে বিস্মিত হলাম। তাড়াহুড়ো করে জানতে চাইলাম কি ঘটেছে এখন তুমি বাসায় বসে আছো ?  মুজিব কোন কথা না বলে পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে দিলো। বেগম মুজিবের লেখা চিঠি। তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়েছে সে খবর। আমি হাসতে হাসতে মুজিবকে জড়িয়ে ধরে বললাম এত ভালো খবর। কন্যা সন্তানের কথা শুনে মন খারাপ নাকি? তাকে হাদিসের কথা বললাম ‘তোমাদের মধ্যে সেই বেশী ভাগ্যবান যার প্রথম সন্তান কন্যা’। মুচকি হাসলো মুজিব। খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেল।  বুঝতে পারলাম হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই বলে মনটা খারাপ। যা হোক শেষ পর্যন্ত নব জাতকের জন্য বিপুল পরিমান বাজার করে রাতের বেলা গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে লঞ্চে তুলে দিলাম শেখ মুজিবকে। ওই কন্যা সন্তানটিই শেখ হাসিনা এবং সেই ভাগ্যবান পিতা শেখ মুজিব আমার বন্ধু যিনি বাঙ্গালী জাতির গর্বিত জনক। আজ বাংলার মানুষ যেন মুজিব নামটাই ভুলে গেছে ,আমাদের বন্ধু মুজিব আপামর বাঙ্গালীর বঙ্গবন্ধু।
—-সাংবাদিক লায়েকুজ্জামানের লেখা থেকে নেয়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top