সকল মেনু

ব্যর্থ হলো তুরস্কে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টা

Turkey_011468638697 আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। শুক্রবার অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করা হলে ছুটিতে থাকা এরদোগান রাতেই ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন।

এদিকে দেশটির সরকারি আইনজীবীদের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাতব্যাপী সংঘর্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর আগে অভ্যুত্থানকারী সেনারা পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের সদর দপ্তরে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালালে নিহত হয়েছে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তা। তবে ওই হেলিকপ্টারটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে প্রেসিডেন্টের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানী আঙ্কারার আকাশে বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিদ্রোহীরা যেসব হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে সেনাবাহিনীকে সেগুলো ভূপাতিতের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

অভ্যুত্থানকে দেশদ্রোহিতা আখ্যা এরদোগান বলেছেন, এর পরিকল্পনাকারীদের চড়া মূল্য দিতে হবে।

এর আগে এরদোগানের আহ্বানে হাজার হাজার সমর্থক রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভের মুখে সেনা বাহিনীর বিদ্রোহী অংশ ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর থেকে সড়ে যেতে বাধ্য হয়।

শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম টিআরটি দখল করে । সেখান থেকে এক ঘোষক বিদ্রোহীদের দেওয়া বিবৃতি পাঠ করেন। এতে বলা হয়,  বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার শাসনের অবসান ঘোষণা করছে। শিগগিরই নতুন সংবিধান করা হবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ভবনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর হাই কমান্ড থেকে এ বিবৃতি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এছাড়া বিদ্রোহী অংশ সেনা সদর দপ্তরে যেসব কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখেছে তাদের মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারও রয়েছেন। রাতেই বিদ্রোহীরা ইস্তাম্বুলের সঙ্গে দেশের অন্য অংশের ব্রিজ বন্ধ করে দেয়।সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এখন থেকে একটি `পিস কাউন্সিল` দেশ পরিচালনা করবে। দেশে কারফিউ এবং মার্শাল ল` জারি করা হয়েছে। তবে বিদ্রোহের পেছনে সেনাবাহিনীর কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা এখনো জানা যায়নি।

রাতে ইস্তাম্বুলের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সেনাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আঙ্কারায় অনেক নিচ দিয়ে জঙ্গিবিমান উড়ে গেছে। এছাড়া ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএন তুর্ক ভবন সেনাবাহিনী দখল করে নেয় এবং এর লাইভ সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়। অভ্যুত্থানকারী সেনারা পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের সদর দপ্তরে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালালে নিহত হয়েছে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তা। তবে প্রেসিডেন্টের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে গুলি ছুড়ে ওই হেলিকপ্টারটি ভূপাতিত করা হয়েছে।

এদিকে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নেমে আসা এরদোগান সমর্থকদেরন লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাটির এক চিত্রসাংবাদিক জানিয়েছেন। তুরস্কে পার্লামেন্ট ভবনেও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে ট্যাংক মোতায়েন করেছে বিদ্রোহীরা। সেই ট্যাংক থেকেই গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এমপিরা নিরাপদ স্থানে লুকাতে সক্ষম হয়েছেন।

এ ঘটনার পরপর প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদ্রিম জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর একটি অংশ বেআইনি অভিযান শুরু করেছে। কোনো অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই অভিযান শুরু করেছে। তবে এটা কোন অভ্যুত্থান নয়।

অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে উপকূলীয় শহরে থাকা এরদোগান রাতেই ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন। তিনি ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে অবস্থান নেন। সিএনএনের মাধ্যমে এরদোগান অভ্যুত্থান ঠেকাতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। বিমানবন্দরে সমর্থকবেষ্টিত এরদোগান এই অভ্যুত্থান ‘দেশদ্রোহীতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ এরদোগান সরকারকে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোনে বলেছেন, ‘ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তুর্কি সরকার, বেসামরিক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

অপরদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, এরদোগান সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে বিদ্রোহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top