সকল মেনু

মীর কাসেম আলী মৃত্যু পরোয়ানা জারি

kashem-ali_14030হটনিউজ২৪বিডি.কম : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জাড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর অর্থের যোগানদাতা এ আলবদর নেতার ফাঁসি বহালের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শহীদুল আলম ঝিনুক জানান, বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালের ৩ বিচারক সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় আসামির মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন। এরপর লাল সালুতে মুড়ে এ মৃত্যু পরোয়ানা ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে পরোয়ানা যাবে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। এদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। নিয়ম অনুসারে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। এরপরও যদি ফাঁসির রায় বহাল থাকে তবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার প্রায় ৩ মাস পর আজ সোমবার দুপুরে বিচারকরা সেই রায়ে সই করেন। এরপর বিকালে ২৪৪ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এ মামলার বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় বলে আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী জানান। নিয়ম অনুযায়ী রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেলে আসামিকে তা পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই পরোয়ানার ভিত্তিতেই শুরু হবে সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি। অবশ্য দ- কার্যকরের আগে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ পাবেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম। রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও তিনি চাইতে পারবেন।

এর আগে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির সাজা বহাল রেখে আপিলের চূড়ান্ত রায়টি প্রকাশ করেছে সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ২৪০ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তারও আগে গত ৮ মার্চ একাত্তরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর অন্যতম শীর্ষনেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া সর্বোচ্চ দ-াদেশ বহাল রাখে আদালত। ১১ নম্বর ছাড়াও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার দায়েও কাসেমের মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছিলে ট্রাইব্যুনাল। তবে চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাসেম আলীকে খালাস দেয়া হয় আর সাজা বহাল রাখা হয় ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগের। মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১১ নম্বর অভিযোগটি হল, ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম আলী। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আবেদনে ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চান তিনি।
৮ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা এবং সেইসময়ের ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলী। এ ১৪ অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাসেমের আপিল মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে ৭ কার্যদিবসে এ মামলার শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। এটি আপিলে সপ্তম মামলা যার চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে মীল কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top