সকল মেনু

নিহত ব্যক্তিই প্রধান আসামি !

176aedf5-16a8-4a2b-9331-a5f04d209e1fএম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলায় ছাত্রদলের স্থানীয় একজন নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে এলাকার লোকজনের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর পুলিশ ক্যাম্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে বাড়িতে পুলিশের এই অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছিল সেটা একজন হত্যা মামলার আসামির বাড়ি। এলাকায় অপরাধী হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তির নাম নাসির সরদার। তিনি দুটি হত্যা মামলার আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতির মামলাও। এসব মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতা হলেও নাসির আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ বলে এলাকার লোকজন জানায়। তাদের অভিযোগ, নিজের বাড়িতে পুলিশ ক্যাম্প থাকার সুযোগে নাসির সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতেন।
পুলিশ ক্যাম্প করার বিষয়টি জানতে চাইলে ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীন বলেন, ‘যাচাই করা ছাড়া সেখানে পুলিশ ক্যাম্প করা ঠিক হয়নি।’
উল্লেখ্য, ঘটনা তদন্তে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. আকরাম হোসেন ৫ সদস্যেও যে কমিটি করেছেন সে কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীনকে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমানকে একটি নির্বাচনী মামলায় আটক করে পুলিশ। তাঁকে ইউনিয়নের জনতাবাজার এলাকায় নাসির সরদারের বাড়িতে থাকা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও এলাকার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নোমান হোসেন সজীব (২২) নামের একজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় আরো কয়েকজন। সজীব স্থানীয় বাজারে তাঁদের মাইকের দোকানে বসতেন। এই ঘটনায় নিহত সজীবকে প্রধান আসামি করে উল্টো মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত কয়েকজনসহ ৭শ’ গ্রামবাসীকে।
সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনার পরদিন শুক্রবার বরিশাল পুলিশ রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেন। ওই সময় হত্যা মামলার আসামির বাড়িতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। পুলিশ কর্মকর্তা ওই বাড়ি থেকে পুলিশ ক্যাম্প ও ক্যাম্পের সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। গ্রেফতার করা হয় বাড়ির মালিক নাসিরকে। তাঁকে গতকাল একটি রাজনৈতিক মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাজাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতাকারীদের শায়েস্তা করতেই নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কথা বলে রাজাপুরে পুলিশ ক্যাম্প আনা হয়। জনতা বাজারের পাশেই ওবায়দুল হক বাবুল হাই স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কিন্তু সহিংসতার ঘটনা না ঘটনায় ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়। পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজানুর রহমান খান তদবির করে চলতি মাসের ১৭ মে আবার নাসির সরদারের বাড়ি পুলিশ ক্যাম্প নিয়ে আসেন।
রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু বলেন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মিজানের সঙ্গে নাসিরের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল। ঘটনার সময় বৃহস্পতিবার রাতে সাদা পোশাকের ৪জন পুলিশ নিয়ে নাসির একটি মামলায় মিজানকে গ্রেফতার করায়। নিজেই জনতা বাজারে উপস্থিত থেকে কাঠ দিয়ে প্রকাশ্যে মিজানকে নির্যাতন করেন।
তবে পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজানুর রহমান খান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি মিজানুর রহমান। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসতে চাইলে তাঁর অনুসারীরা পুলিশকে বাঁধা দেয়। এমনকি পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে তারা আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তখন পুলিশ গুলিবর্ষণ করে।
মামলা ও এলাকাবাসী, মানবাধিকার সংগঠনের নিন্দা-ক্ষোভ : সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ নিহত সজীবকে প্রধান আসামি করে উল্টো এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বিরাজ করছে। মামলা করার বিষয়ে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।
ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মীর খায়রুল কবির জানান, রাজাপুরের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নায়েক আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top