সকল মেনু

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আবাহনীকে জেতালেন মোসাদ্দেক

0011464441916স্পোর্টস ॥ হটনিউজ২৪বিডি.কম : ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নবম রাউন্ডের ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড।

বিকেএসপির-৩ নম্বর মাঠে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ ২৮ ওভারে নেমে আসে। টসে হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে প্রাইম দোলেশ্বর ৭ উইকেটে ১৯১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে আবাহনী লিমিটেড শেষ দুই বলে এক ছক্কা ও এক চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করে।

এ জয়ে সুপার লিগের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল আবাহনী। শনিবার তাদের হয়ে মাঠে নামেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৪৫ ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন তিনি। তবে ম্যাচের মূল নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৩৫ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কার ৫৭ রানের ছোট্ট ক্যামিও ইনিংসে আবাহনীর জয় নিশ্চিত করেন মোসাদ্দেক। শেষ দুই বলে দুটি বাউন্ডারিও এসেছে তার ব্যাট থেকে।

টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই ধাক্কা! তাসকিন আহমেদের গতির কাছে পরাস্ত লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইমতিয়াজ। ইনিংসের প্রথম বলে ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন। দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টায় রনি তালুকদার ও রকিবুল হাসান। ৩৪ রান যোগ করেন তারা। এরপর আবারো ব্যাটিং বিপর্যয় দোলেশ্বরের।

দলীয় রান ৩৪ থেকে ৫৮ পর্যন্ত যেতেই ৩ উইকেট হারায় তারা। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারের আগের ওভারে (পঞ্চম) সাকলায়েন সজীবকে উঠিয়ে মারতে গিয়ে শাহাজাদার হাতে ক্যাচ দেন রনি তালুকদার (১৮)। পরের ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন ফিরিয়ে দেন দোলেশ্বরের ভারতীয় ক্রিকেটার অশোক মানেরিয়াকে (১)। আইপিএল খেলে দেশে ফেরা সাকিব আল হাসান নিজের দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন রকিবুল হাসানের উইকেট (২৫)। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন রকিবুল।

পঞ্চম উইকেটে ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে যায়। আবাহনীর শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে জুটি গড়ে তুলেন নাসির ও সানজামুল। রানের চাকা সচল করার পাশাপাশি দ্রুত রান তোলার তাড়াও ছিল তাদের মধ্যে। তাদের ১২.২ ওভারে ৮২ রানের জুটি ভেঙে যায় রান আউটে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সানজামুল ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪০ রান। অবশ্য তার বিদায়ের আগে নাসির হোসেন লিগের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন।

হাফসেঞ্চুরির পর খোলস থেকে বের হয়ে আসেন নাসির। পরের ২২ রান করেন ১০ বলে। তাসকিনের করা ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দুটি বিশাল ছক্কা হাঁকান নাসির। দুই বল পর আবারো একটি চার। কিন্তু শেষ বলে তাসকিন ঠিকই প্রতিশোধ নেন। ৫৬ বলে ৭২ রান করা নাসির তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। আগের রাউন্ডে মাত্র ১৮ রান করা নাসির শনিবার বিকেএসপিতে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে বড় রানের পুঁজি এনে দেন। শেষ দিকে জিয়াউর রহমানের ছোট্ট ক্যামিও ইনিংসে ১৯১ রানের পুঁজি পায় প্রাইম দোলেশ্বর। শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রান করেন জিয়াউর। ফরহাদ রেজা ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

বল হাতে আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। ১টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, সাকলয়েন সজীব ও মোসাদ্দেক হোসেন।

জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ২৫ রানে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাজঘরে। প্রথমে আল-আমিনের বলে জিয়াউর রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তামিম (১০)। পরে লিটন দাস (১১) আউট হন নাসির হোসেনের বলে। তৃতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান। নিজের আইডলকে সঙ্গে নিয়ে শান্ত বেশ ভালোই ব্যাট চালাতে থাকেন। শান্ত আগ্রাসী মনোভাব না দেখালেও সাকিব কিছুটা দেখিয়েছেন। স্ট্রাইক রোটেট করে দুজনই রান তুলেছেন দ্রুত।

আবাহনীর দলীয় শতরানের এক রান আগে এ জুটি ভাঙেন মিডিয়াম পেসার ফরহাদ রেজা। দোলেশ্বরের অধিনায়ক শান্তকে ফিরিয়ে দেন ৩৯ রানে। স্কোরবোর্ডে ২০ রান যোগ করতেই সাকিবও সাজঘরের পথ ধরেন।হাফসেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থেকে অশোক মানেরিয়ার বলে স্ট্যাম্পড হন সাকিব।

সাকিবের ফিরে যাবার পরপরই ম্যাচের উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। কারণ এরপর ব্যাটসম্যান বলতে রজত ভাটিয়া ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তারা পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ২৭ রান। আল-আমিন নিজের পঞ্চম ওভারে ভাটিয়াকে সাজঘরে ফেরান ১৫ রানে।

ততক্ষণে ক্রিজে মোসাদ্দেক দূত্যি ছড়াতে শুরু করেন। অভিষিক্ত সোহাগ রেজার বলে পরপর তিনচার, আল-আমিনের বলে চার ও নাসিরের বলে ছয় মেরে আবাহনীকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন মোসাদ্দেক।

শেষ ২৪ বলে আবাহনীর প্রয়োজন ৩৬ রান। শুরুটা ভালো করেন আবুল হাসান রাজু। ২৫তম ওভারের প্রথম বলে চার। কিন্তু একবল পরই উইকেট হারান রাজু (৬)। লড়াইয়ে মোসাদ্দেক ও মোহাম্মদ শাহজাদা। পরের ৯ বলে এল ১০ রান। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ২২ রান। প্রথম ৩ বলে এল ২ রান। পরের ৩ বলে ৯। আল-আমিনের করা শেষ ৩ বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান মোসাদ্দেক। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পরের ওভারে নিজেকে স্ট্রাইকে রাখেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শেষ ওভারে ১১ রান প্রয়োজন আবাহনীর। দোলেশ্বরের অধিনায়ক নিজ হাতে বল তুলে নিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হল না! প্রথম ৩ বলে এল মাত্র ১ রান, সঙ্গে একটি উইকেটও। চতুর্থ বলে মোসাদ্দেক নেন ২ রান। পঞ্চম বলে হাঁকান ছক্কা। কিন্তু শেষ বলে ২ রানের প্রয়োজনে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে এল চার রান। সঙ্গে সঙ্গে উৎসব আবাহনী শিবিরে। শ্বাসরূদ্ধকর জয়ে লিগে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পেরে কর্মকর্তাদের মুখেও হাসি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top