সকল মেনু

পার্বতীপুরে বিষমুক্ত লিচুর বাম্পার ফলন

0908eb16-a628-401b-85fd-77307843cc46রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : লিচুতে কীটনাশক ব্যবহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের কৃষকেরা। আর তাই এ উপজেলায় বিভিন্ন ফসলের মাঠে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত আইপিএম পদ্ধতি। এরই মধ্যে সফলভাবে ব্যবহারও শুরু হয়েছে এ পদ্ধতির। একদিকে বিষমুক্ত লিচুর প্রতি ক্রেতাদের অধিক আগ্রহ, অধিক মূল্যে বিক্রয়ের পাশাপাশি উৎপাদন খরচও কমে গেছে বলে দাবি করেন কৃষকেরা। কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া স্বল্প খরচে অধিক লিচু উৎপাদনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার বা আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারে লিচু চাষে উপজেলার কৃষকেরা ঝুঁকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন- মন্মথপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) ফারুক আহম্মেদ।
তিনি বলেন, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার বা আইপিএম পদ্বতি হচ্ছে, লিচু গাছে মুকুল আসার আগে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। গাছের গোড়ায় জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। গাছের মরা ডালপালা কেটে ছেটে ফেলতে হয়। লিচু যখন মার্বেল আকৃতি ধারন করে সে সময় টিআইএলটি প্রয়োগ করতে হয় সাদা পানির সাথে। তিনি আরো বলেন, লিচু যাতে না ফাটে এবং ফল পুষ্ট ও সুগঠিত হয় তার জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বোরন, ২ গ্রাম জিংক ও ২ গ্রাম ইউরিয়া মিশ্রন করে স্প্রে করতে হয়।
জানা যায়, কৃষকদের এ পদ্ধতি ব্যবহারে সহযোগিতা করছে ইউএসআইডি এর সাহায্যপুষ্ট আইপিএম আইএল (সিআরপি), বাই ইন প্রজেক্ট, বাংলাদেশ। সংস্থাটি এ পদ্ধতি ব্যবহারে মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও কৃষকবধুদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন।
এবার দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আইপিএম পদ্বতিতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। মধুমাস শুরুতেই বাজারে পর্যাপ্ত লিচু উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন পরিবহন যোগে এখান থেকে এসব লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে বলা হয়েছে এবার ৪০৬ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। গত বছর লিচু চাষের পরিমান ছিল ২৫০ হেক্টর।
উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের কৈবর্তপাড়া এলাকার সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) সদস্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কৃষক দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, তার বাগানে ১ হেক্টর জমিতে লিচু হয়েছে এবার। বাগানে ১৫০টি বোম্বাই লিচু, ৫০টি বেদেনা লিচু, ২০ মাদ্রাজি ও দেশি প্রজাতির বেশ কিছু লিচু গাছ রয়েছে। বাগানটি তিনি চলতি মৌসুমের জন্য ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। লিচু বাগানটি ক্রয় করেছেন পার্বতীপুর শহরের ব্যবসায়ী আঃ রহিম।
পার্বতীপুর কৃষি কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ মোঃ রওশন কবির বলেন, বাগান মালিকেরা ও মৌসুমী লিচু ব্যবসায়ীরা লিচু বাগান আগাম ক্রয় করে ভালো লিচুর ফলন পাওয়ার আশায় লিচু বাগানে পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষণ করার কারণে অতি খরা ও তাপদাহ থাকলেও লিচুর ফলনের কোন ক্ষতি হয়নি। চলতি বছর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এধরনের ক্ষতিকারক স্প্রে গাছে প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা প্রশিক্ষণ ও তদারকি করা হয়েছে। আগামীতে এ বিষয়ে আরো নজরদারি বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান। লিচু চাষে অধিক মুনাফা হওয়ায় ও কোন রকম ঝুঁকি না থাকায় পার্বতীপুরে প্রতি বছরই লিচু বাগানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে তিনি উল্লে¬খ করেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় প্রচলিত প্রজাতির পাশাপাশি সুখ্যাত ও সুস্বাদু বেদেনা লিচু, হাইব্রিড ভ্যারাইটি চায়না থ্রি ও চায়না ফোর লিচুর চাষও বেড়ে গেছে। বাজারে চায়না থ্রি ও চায়না ফোর লিচু প্রতি শ’য়ের দাম ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে কেনা বেচা হচ্ছে বলে লিচু ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top