সকল মেনু

সোয়া ৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে ৪৭৯ আশ্রয়কেন্দ্রে

৫০নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২১ মে : নগরী ও ১৪ উপজেলার ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে (সাইক্লোন সেল্টার) সোয়া চার লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি, এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লক্ষাধিক কর্মী দুর্যোগের প্রস্তুতিকালীন থেকে দুর্যোগোত্তর সেবা দিতে প্রস্তুত।

ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা, চরাঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং, পতাকা ওড়ানো ও উদ্বুদ্ধ করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিছু কিছু এলাকা থেকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে।

শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এসব তথ্য জানান কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতির লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।

জেলা প্রশাসক জানান, রোয়ানু চট্টগ্রামে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এনজিও প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছি। চট্টগ্রাম সব সাইক্লোন সেল্টার খোলা রাখার ব্যবস্থা রেখেছি। ডিসি অফিসে ২৪ ঘণ্টার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছি। সবার ছুটি বাতিল করেছি। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডের জাহাজ প্রস্তুত আছে। র‌্যাব ও ডিসি অফিসের দ্রুতগামী বোট রেডি আছে। এককথায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি আমরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র মাতাব্বর সভায় জানান, চট্টগ্রামের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আশঙ্কা বিকেল তিনটার দিকে। মংলার দিকে সকালেই আঘাত করতে পারে। এরপরই শুরু হবে ভারী বর্ষণ। এখন যদি আকাশ পরিষ্কার দেখে উপকূলের লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যেতে না চান তবে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাতের পর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হবে। তাই পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে। তহসিলদারদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পাহাড়ের মানুষকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসি ল্যান্ড বিষয়টি তদন্ত করবেন। যেখানে স্কুল-কলেজ ভবন রয়েছে সেগুলোতে মানুষ যাতে আশ্রয় নিতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আশা করে, গণমাধ্যম সঠিক ভূমিকা রাখলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। আমরা চাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি সভায় জানান, ২৪২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীতে থাকবে নয়টি। বাকিগুলো ১৪ উপজেলায় কাজ করবে।

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি জানান, ‘সবার আগে, সবার পাশে’ থাকতে ফায়ার সার্ভিস ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনটি স্পেশাল রেসকিউ টিম প্রস্তুত আছে। এ ছাড়া এক হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) প্রতিনিধি জানান, উপকূলীয় ১৩ জেলার ৪০ উপজেলার ৩৫০ ইউনিয়নে সিপিপি’র ৩ হাজার ৬৮৪ ইউনিটে ১৮ হাজার ৪৮৫ জন নারীসহ মোট ৫৫ হাজার ২৬০ জন নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ায় ৬ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবার সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কাজও শুরু করে দিয়েছেন তারা।

তিনি জানান, সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকেরা মাইক ও ম্যাগাফোনে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত প্রচার করছেন। ম্যাগাফোন নষ্ট হলে মসজিদের মাইকে প্রচার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দুটি সংকেত পতাকা উত্তোলন করছেন। সংকেত বেড়ে ৮-১০ হলে তারা তিনটি পতাকা উত্তোলন করে মানুষকে সতর্ক করবেন।

রেড ক্রিসেন্টের প্রতিনিধি জিয়াউল কবির সোহেল জানান, ১২০ জন ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছে। লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে মাইকিং ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় তারা মানুষকে নিরাপদে নিয়ে আসতে পারবেন। দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। একটি সিটি করপোরেশনে, অন্যটি জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) প্রতিনিধিরা জানান, ইউনিসেফের চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক, ওয়াল্ডভিশনের ২০০, ব্র্যাকের ১ হাজার ৩০০ কর্মী ও ১ হাজার ৫০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা, ঘাসফুলের ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক, ব্যুরো বাংলাদেশের ৪২৫ কর্মী কাজ করছে। এ ছাড়া কারিতাসসহ যেসব এনজিওর নিজস্ব সাইক্লোন সেল্টার আছে সেগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top