সকল মেনু

প্রধানমন্ত্রী জয়ের চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে বললেন খালেদাকে

seikh_hasina1462502375সংসদ প্রতিবেদক : বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘কয়েকদিন আগে জয় সম্পর্কে বিএনপি নেত্রী একটা অসত্য তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইল। জয় সেটা চ্যালেঞ্জ করেছে। আমি আশা করি, তিনি সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দেবেন এবং সেটা প্রমাণ করবেন।’

বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নিজেরা মানি লন্ডারিং, ঘুষ, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা কত টাকা চুরি করেছে, কত টাকা ঘুষ খেয়েছে, কত টাকা তারা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে রেখেছে? এই প্রশ্ন জাগে। তারা আমেরিকায় এফবিআইয়ের অফিসারকে ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলতে পারে- সেই পরিমাণ অর্থ বিএনপি নেতাদের কাছে আছে এবং এটা আমেরিকাতেই ধরা পড়েছে।’

‘আমেরিকা সরকার এবং এফবিআই-ই এই মামলা করেছে। যেখানে বিএনপি নেতার নামও এসেছে। সেখানেই বেরিয়ে এসেছে জয়কে তারা অপহরণ করবে। তাকে অফ করে দেবে অর্থাৎ তাকে হত্যা করে ফেলবে। তাকে সারা জীবনের জন্য সরিয়ে দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘এই ধরনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে এবং ওই মামলা চলাকালেই বিএনপি নেত্রীর দুই উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান এবং শফিক রেহমানের নাম বেরিয়ে এসেছে। এটা আমেরিকার দেওয়া তথ্য। এখানে আমাদের কোনো কিছু নেই। এটা হলো বাস্তব কথা।’

‘অথচ কয়েকদিন আগে বিএনপি নেত্রী জয় সম্পর্কে একটা অসত্য তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইল। কিন্তু জয় সেটা চ্যালেঞ্জ করেছে। আমি আশা করি, তিনি সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দেবেন এবং সেটা প্রমাণ করবেন।’

‘ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছি আমরা দুই বোন। জীবনে কোনোদিন কিছু চাইনি। ছেলেমেয়েদের একটি জিনিসই শিখিয়েছি যে, তোমাদের একটামাত্র সম্পদই দিতে পারব- সেটা হচ্ছে শিক্ষা। তাই আমার ছেলেকে শিক্ষা দিয়েছি।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে জয়ের উন্নত শিক্ষাজীবনের কথা তুলে ধরে আরো বলেন, ‘বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ডিগ্রি নেওয়া। তাকে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত করেছি। চোর-চোট্টা বানাইনি এবং সেও আসেনি এখানে চোর-চোট্টা হতে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে।’

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিটি পরামর্শ জয়ের কাছ থেকে নেওয়া’- এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা হয়ে আমি তার কাছ থেকে শিখেছি। কাজেই আমি এটুকু বলব- আমার ছেলেকে শিক্ষা দিয়েছি। শুধু বিলাসবহুল জীবন যাপন করা শিখায়নি। সে দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করে যাচ্ছে। বিনিময়ে কিছু চায়নি, নেয়নি। নিজেরটা নিজেই করে খাচ্ছে।’

‘কিন্তু কথা নেই বার্তা নেই, তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করছে। সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র। এটাই তাদের পেশা।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে সকলে যেন একটু সজাগ থাকেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করেন। আর কারো ছেলেমেয়ে যেন এই সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হয়। সেজন্য প্রতিটি অভিভাবকের কাছে আমার আবেদন থাকবে।’

পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনে মসজিদের ইমাম এবং শিক্ষকদের প্রতিও এই আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের কাছে আমাদের ওয়াদা ছিল। ক্ষমতায় গেলে এদের বিচার করব। সেই বিচার আমরা করছি। সেই বিচারের রায় হচ্ছে, কার্যকর হচ্ছে। বাংলাদেশ অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে। আমরা দেশকে অভিশাপ মুক্ত করছি।’

‘জানি না বিএনপি নেত্রীর সমস্যাটা কোথায়। আজকে তার বিরুদ্ধে মামলা। আমার বিরুদ্ধেও তো মামলা হয়েছিল। বিএনপির আমলে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর দেখা গেল যত আক্রমণ আমার ওপর। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। অথচ প্রথমে আমাকে গ্রেপ্তার করল।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে থাকতে খবর পেলাম আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি সেই সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পেয়েছিলাম কেন? কারণ আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি কোনো অপরাধ করি নাই।’

‘মিথ্যাকে কখনো আমি মেনে নেব না’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায় ও সত্যের জন্য রাজনীতি করি। আমি তো বিদেশ থেকে চলে এসেছিলাম। তাই আজকে আমার প্রশ্ন। বিএনপি নেত্রীর মামলা চলে কোর্টে কিন্তু তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন। প্রেস কনফারেন্স করতে পারেন। তখন অসুস্থ হন না। কিন্তু মামলা মোকাবিলা করার সময় উনি অসুস্থ হয়ে যান। কী কারণে? চোরের মন পুলিশ পুলিশ। অপরাধী মন বলেই মামলা মোকাবিলা করতে ভয় পান। যদি তার মাঝে সততা থাকত; আত্মবিশ্বাস থাকত- তাহলে কোর্ট থেকে এভাবে পালিয়ে বেড়াতেন না।’

এর আগে গত রোববার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যাবাদী’ ও ‘চোর’ বলে অভিহিত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজের ফেসবুকে পেজে জয় এই স্ট্যাটাস দেন।

একই দিনে বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক শ্রমিক সমাবেশে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন। জোর করে ক্ষমতায় থেকে তারা লুটপাট করছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই এদেশ উন্নত হোক – আরো এগিয়ে যাক। বাংলাদেশের এই মাটিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের স্থান নেই। অনেকেই চেষ্টা করবে, জঙ্গিবাদ আছে দেখিয়ে-ঠেকিয়ে আবার আমাদের দেশটাকে নিয়ে খেলা করার। কিন্তু সেই খেলা আমি বেঁচে থাকতে কাউকে খেলতে দেব না।’

‘বাংলাদেশের মানুষের দায়িত্ব আমাদের। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যতটুকু যা করার দরকার আমরা করছি। এক্ষেত্রে আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।’

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে খুব দ্রুত দেশের উন্নতি হতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top