সকল মেনু

আইএসের টাঙ্গাইলে ব্যবসায়ী হত্যার ‘দায় স্বীকার’

site_int1462025513নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে কাপড় ব্যবসায়ী নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দারকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

সন্ত্রাসের হুমকি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আইএসের সংবাদ সংস্থা আমাক নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নিখিল চন্দ্রকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে এ জঙ্গিগোষ্ঠী।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোপালপুর পৌরসভার পাকুটিয়া-সূতিকালিবাড়ি সড়কের ডুবাইল এলাকায় নিজ দোকানের সামনে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন স্থানীয় গজ কাপর ব্যবসায়ী ও দর্জি নিখিল জোয়ার্দার। নিখিল ওই এলাকার নলিনী কান্ত জোয়ার্দারের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় নিখিল দর্জি বাড়ির সামনে ‘তিথি তীর্থ বস্ত্রালয় এন্ড টেইলার্স’ নামের নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে কাপড় সেলাই করছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে ২০-২২ বছর বয়সি তিন যুবক দোকানের সামনে আসে।চালকের মাথায় হেলমেট ছিল।যুবকদের একজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে নিখিলকে দোকান থেকে ডেকে বের করে। কাছাকাছি যাওয়ামাত্র মোটরসাইকেলে থাকা দুই যুবক ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে তাকে নির্বিচারে কোপাতে থাকে। যুবকরা তার বুকে, ঘাড়ে ও মাথায় ৭/৮টি কোপ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে করে সূতিকালিবাড়ির দিকে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ঘটনাস্থলে একটি কালো রঙের ব্যাগে ৪/৫টি ককটেল রেখে যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন নিখিল। এ সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তার দোকানে চড়াও হয়ে তাকে অপদস্ত করে। পরে এই নিয়ে মামলা করলে পুলিশ নিখিলকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। ১ মাস ২৪ দিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন নিখিল।

ধর্ম অবমাননার দায়ে করা ওই মামলার বাদী ছিলেন দৈনিক ইনকিলাবের গোপালপুর সংবাদদাতা ও আলমনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আমিনুল ইসলাম।

তিনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, নিখিল অনুতাপ প্রকাশ করায় এবং ডুবাইল গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বির অনুরোধে তিনি ছয় মাস আগে আদালত থেকে মামলা তুলে নেন।

হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বাড়িতে গেলে নিখিলের স্ত্রী আরতি জোয়ার্দার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কোনো শত্রু নেই। আমার স্বামী হয়ত অনেক আগে ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলেছিল। কিন্তু তা জানে মেরে ফেলার মতো তো কিছু ছিল না।’

হত্যার বিবরণ দিয়ে নিহতের ছোট মেয়ে বন্যা জোয়ার্দার হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘ঘটনার ৫ মিনিট আগে একটি মোটরসাইকেলে ৩ যুবক বাবার দোকানের সামনে আসে। তার মধ্যে একজন বাবার কাছে পানি খেতে চায়। অন্যজন পাশের দোকানে যান চিপস কেনার জন্য। বাবা মাকে বাড়ি থেকে পানি আনতে বললে মা বাড়ি আসেন পানি আনতে। বাড়ি থেকে পানি এনে দেখেন দুজন বাবাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মার ডাক ও চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলেও তাদের ধরতে পারেনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ঘটনাস্থলের পাশেই আমি কাজ করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ করে চিৎকারের শব্দ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি দুই যুবক নিখিলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফেলে মারা গেছে কি না তা দেখছে। এ সময় আমি হাতে ইট নিয়ে তাদের দিকে তেড়ে যাই। যুবকদের মধ্যে একজন আমাকে হুমকি দেয়, কাছে গেলে মেরে ফেলা হবে। পরে তারা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। তাদের পরনে ছিলো শার্ট-প্যান্ট। তিন যুবকেরই বয়স ২০-২২ বছরের মধ্যে।’

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর র‌্যাব-১২ এর সিও ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাহবুদ্দিন খান, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার, র‌্যাব-১২ এর টাঙ্গাইলের ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ সময় মো. শাহবুদ্দিন খান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। তদন্তের স্বার্থে এখন সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। অতি শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে। র‌্যাব ও জেলা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ বিষয়টি দেখছে।’

হত্যাকাণ্ডের পর গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল জলিল জানান, লাশের কাছে পাওয়া বোমার মতো বস্তুগুলো উদ্ধার করে গোপালপুর থানায় বালুচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। ওই ব্যাগে থাকা দুটি চাপাতি উদ্ধার করে মামলার আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উগ্রপন্থীদের দ্বারাই নিখিল খুন হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে নিখিলের ভাতিজি স্বর্ণাকে দুই বছর আগে ঢাকা থেকে ডিভোর্স করিয়ে আনার পর স্বর্ণার স্বামী রূদ্র নিখিলের পরিবারের সবার প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। তদন্তের ক্ষেত্রে উগ্রপন্থী ছাড়াও এ বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top