ঘরের মাটিতে ভারত ফাইনাল খেলবে, এই ভেবে ইডেন গার্ডেনের সবচেয়ে দামী ক্লাব হাউজের সাতটি টিকিট ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকায় কিনে রেখেছিলেন কলকাতার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। ভারত ফাইনালেও উঠল না, টিকিটের অর্থগুলোও জলে গেল, বলা যায়। ধোনি বাহিনী তাকে এভাবে হতাশ করবে, তা কল্পনাও করেননি ওই ব্যবসায়ী।
ভারতীয় দল হতাশ করেছে। এর বিপরীতে চমক দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ? অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়কে চমক বলা যায় না। এর আগেও বিভিন্ন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকেই প্রায় নিয়মিত জয় পাচ্ছে ক্যারিবীয়রা। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দারুণ পারফরম্যান্স করে আসছে দলটি। সেমিফাইনালের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলেও তাতে তারা ভেঙে পড়েনি, বরং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠেছে।
অবশ্য বিশ্ব্কাপের আগে ক্যারিবীয়দের পারফরম্যান্স এতটা চোখধাঁধানো ছিল না। দল নির্বাচন নিয়েও তো ঝামেলা হয়েছে। পারিশ্রমিক নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে গণ্ডগোল তো লেগেই আছে। সেই দলটি এভাবে বড় দলগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিল! ক্রিকেটবোদ্ধাদের অনুমানকে ভুল প্রমাণ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ফাইনালের আগে শনিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হাজির ক্যারিবীয়নাদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। প্রশ্ন উঠল সাফল্যের রহস্য নিয়ে। স্যামি জানালেন, অনেক ক্ষোভ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের মনে, অনেক কষ্ট তাদের।
বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস এক কলামে লিখেছিলেন, ‘ভারতের মাটিতে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। যদিও তাদের মানে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কীসের অভাব? আমার মনে হয়, ক্যারিবীয়ানদের বুদ্ধির অভাব আছে, যাকে বলে শর্ট অব ব্রেইন।’
নিকোলাসের এ লেখায় ক্ষুব্ধ ক্যারিবীয় শিবির। তারা হয়ত পণ করেছে, যে করেই হোক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চাই-ই চাই। সে পথে ভালোভাবেই এগিয়েছে তারা। স্যামি শনিবার সেই সূত্র ধরে বলেন, ‘ব্রেইন ছাড়া কি মানুষ হতে পারে? জীবজন্তুরও তো ব্রেইন আছে। এটা কেমন আচরণ, কেমন উক্তি? এটা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদেরকে তার এ একটি কথাই তাতিয়ে দিয়েছে। আমরা ক্ষোভ নিয়ে টুর্নামেন্ট খেলছি। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ টুর্নামেন্টের সেরা হবই হব। আমরা ও পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বাস, আমরা পারবই পারব।’
ক্ষোভ প্রশমনের সূবর্ণ সুযোগ ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে। সেটাও আবার নিকোলাসের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এটা তাদের ফাইনালের লড়াইয়ের থেকেও ‘ব্রেইন’ দেখানোর লড়াই। পরিসংখ্যান, অতীত রেকর্ড, মাঠ, বর্তমান পারফরম্যান্স সবই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে। এবার শুধু তাদের হারানোর পালা।
টি-টোয়েন্টিতে ১৪ বার মুখোমুখি হয়েছে এ দুই দল। এর মধ্যে মাত্র ৪ বার জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেও ক্যারিবীয়ানদের দাপটে মাথা নামিয়ে মাঠ ছেড়েছিল তারা। বিশ্বকাপে ৪ বার মুখোমুখি হয়ে প্রত্যেক বারই জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দুই দলের লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে টস। আগের পাঁচ আসরের ফাইনালে চার বারই টসজয়ী দল শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল। ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজও ব্যতিক্রম নয়। ২০১০ ও ২০১২ সালে টস জিতে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল দুই দল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিগত পাঁচ আসরের প্রতিবারই নতুন চ্যাম্পিয়ন পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। এর মধ্যে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজও আছে। এবার কোন দল দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করছে, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে রোববার রাত পর্যন্ত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।