সকল মেনু

এক হাজার বছরে বিলীন হয়েছে দেড় হাজার নদী

৪৪.নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৪ মার্চ : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের ( বাপা) নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশ নদী বিপর্যয়ের দেশ। গত এক হাজার বছরে দেড় হাজার নদী বিলীন হয়ে গেছে। ২৩০টি নদী এখন জীবিত আছে। উজানে পানি কমে যাওয়ায় নদীগুলোর এমন দশা হয়েছে। তারা ডেল্টা প্ল্যান নদীর জন্য অশনিসংকেত, এই ভুল নীতি বাতিল করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

রোববার ডেল্টা প্ল্যান নদীর জন্য এক অশনিসংকেত শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে ১৩ ফুট পুরো পলিথিনের স্তর জমা হয়েছে। এগুলো অপসারণের কোন ব্যবস্থা হচ্ছেনা। নদীতে কারখানার ৬০ ভাগ বর্জ্য। ঢাকা ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনের ৩০ ভাগ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সরকারি ভাবে নদী দূষণ করা হচ্ছে। নৌ-যানের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে।

বুড়িগঙ্গার সীমানা পিলার সম্পর্কে তারা বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে নদীর পিলার যথাস্থানে স্থাপন করা হয়নি। সীমানা পিলার স্থাপনের নামে তুরাগের ৫ কোটি ২৩ লাখ স্কোয়ার ফুট জমি বেদখল হয়ে গেছে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষায় তার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নদী রক্ষায় প্রশাসনিক কোন কাজ বা সাফল্য নেই। ২০০৯ সালে দেশের উচ্চ আদালত থেকে নদী রক্ষায় একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করা হয়েছে। যাতে নদী রক্ষার প্রথম কাজ হিসেবে নদীর সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত করতে বলা হয়েছে। নদী রক্ষার লক্ষ্যে নদী টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্স গত ৫, ৬ বছরে একটি নদীও দখলদারমুক্ত করতে পারেনি। বরং ঢাকার চারদিকের নদীর বিশাল আয়তনের জমি ছেড়ে দিয়ে ভুল স্থানে খুঁটি বসিয়ে দখলদারদের হালাল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ একটি নদী রক্ষা কমিশনও গঠন করা হয়েছে।যার কোন নির্বাহী ক্ষমতা নেই, এর কাজই শুরুই হয়েছে হবিগঞ্জের সোনাই নদীর মধ্যে এক দখলদারের তৈরি বেআইনি ভবনকে হালাল করার মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রয়োজন একটি নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন একটি শক্তিশালী নদী কমিশন।

তিনি বলেন, নদীর সকল সমস্যায় করণীয় হিসেবে জাতিসংঘ দীর্ঘ দেড় যুগ আলোচনার পর গত বছর গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ আইন ১৯৯৭। এটির সকল দিক নির্দেশনার বাস্তবায়নের ভিত্তিইে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নদীসমূহের সকল প্রকার সংকট নিরসন সম্ভব। উজানের রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে নদীর পানি ব্যবহার প্রশ্নে এত সংকট আর দেশের অভ্যন্তরে ভুল প্রকৌশল কার্যক্রমের কারণে সকল নদী ধ্বংসের মুখে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সরকার উক্ত জাতিসংঘ আইনটিতে অনুস্বাক্ষর করেনি।

তিনি বলেন, ষাটের দশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে বিদেশি পরামর্শে নদী-বিধ্বংসী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে ওলন্দাজ সহযোগিতায় বাংলা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর ওপর কাজ চলছে। মনে হচ্ছে পুনরায় একটি ভ্রান্ত ধারায় বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।

তিনি আরো বলেন, নেদারল্যান্ড একটি বদ্বীপ প্রধান দেশ হলেও, তা বঙ্গীয় বদ্বীপ থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। কাজেই বদ্বীপ ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশকে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা পারদর্শীতার ভিত্তিতে নিজের বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।  তাই পরিবেশ ও মানুষ রক্ষার স্বার্থে নদী বান্ধব নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। নদী দখল-দূষণ ও ধ্বংসের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সকল কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে মূল বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব ও বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top