সকল মেনু

বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিলেন ১১ জন

৩ .নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১ ফেব্রুয়ারি :  বাঙালির ভাষার মাসের প্রথম দিন ১১ লেখক, সাহিত্যিক অনুবাদকের হাতে এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এবার কবিতায় আলতাফ হোসেন, কথাসাহিত্যে শাহীন আখতার, প্রবন্ধে যৌথভাবে আবুল মোমেন ও আতিউর রহমান, গবেষণায় মনিরুজ্জামান, অনুবাদে আব্দুস সেলিম, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে তাজুল মোহম্মদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। আর আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী ক্যাটাগরিতে ফারুক চৌধুরী, নাটকে মাসুম রেজা, বিজ্ঞান/প্রযুক্তি/পরিবেশ ক্যাটাগরিতে শরীফ খান এবং শিশুসাহিত্যে সুজন বড়ুয়া  পেয়েছেন এ পুরস্কার।

১০টি ক্যাটাগরিতে মোট ১১ জনকে এবার এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখ টাকা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান গত ২৮ জানুয়ারি এবারের পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন।

আলতাফ হোসেন : পঁয়ত্রশি বছর আগে প্রথম কবিতার বই ‘সজল ভৈরবীর প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশের কবিতা প্রেমিদের আলোচনায় এসেছিলেন আলতাফ হোসেন। এরপর তার লেখা ‘পাখি বলে’ ও ‘কী ফুল ঝরিল বিপুল অন্ধকারে’সহ বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রস্থ প্রকাশিত হয়েছে গত তিন দশকে। ১৯৪৯ সালের ২৭ অক্টোবর জন্ম নেয়া আলতাফ লেখাপড়া করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কবিতার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন গল্প ও প্রবন্ধ। কবি আলতাফ হোসেনের অন্য বইগুলো- ‘লাজুক অক্টোপাস, ‘ভূমধ্যসাগরে অন্ধ ঘূর্ণি যা বলুক, ‘সঙ্গে নিয়ে চলে যাই পাহাড় চূড়োয়, ‘বলি যে তারানা হচ্ছে, ‘তারপর হঠাৎ একদিন মৌমাছি’।

শাহীন আখতার : নব্বইয়ের দশক থেকে নিয়মিত লিখে আসা শাহীন আখতার  লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিষয় ছিল অর্থনীতি। ১৯৬২ সালে কুমিল্লার চান্দিনায় বন্মগ্রহণ করা শাহীনের লেখা সাম্প্রতিক সময়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। তার লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘তালাশ’২০১১ সালে অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতে। ‘পালাবার পথ নেই, ‘ময়ূর সিংহাসন’ও সমালোচকদের সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া ‘বোনের সঙ্গে অমর লোকে, ‘শ্রীমতির জীবনদর্শনসহ কয়েকটি গল্পের সঙ্কলন বেরিয়েছে শাহীন আখতারের। তার সম্পদনায় তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে ‘সতী ও স্বতন্ত্ররা- বাংলাসাহিত্যে নারী’।

আবুল মোমেন : প্রবন্ধের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারে মনোনীত আবুল মোমেন দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখে আসছেন। প্রবন্ধের বাইরে তিনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, কিশোরসাহিত্য। সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজলের ছেলে মোমেন ১৯৪৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষকতায় কর্মজীবনের শুরু হলেও পরে যোগ দেন সাংবাদিকতায়। শিক্ষা ও শিল্পকলা বিষয়ে তার একাধিক বই রয়েছে। রবীন্দ্র ভ্রমণ সাহিত্য সমগ্র (দুই খণ্ড), বাংলা ও বাঙালির কথা, কাগজের কুশীলব এবং বিজ্ঞানী মামা ও অপারেশন ফিউচার তার উল্লেখযোগ্য বই।

আতিউর রহমান : অর্থনীতি নিয়ে কাজের জন্য গত কয়েক বছরে দেশে বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়া আতিউর রহমান এই প্রথম কোনো সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রকৃতিপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে পরিচিত এই অর্থনীতিবিদ-গবেষক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণ বিপ্লব নিয়ে গবেষণামূলক লেখা রয়েছে তার। বলা হয়, অর্থনীতির মতো বিষয়ের সঙ্গে তিনি সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তার লেখা ‘রবীন্দ্র চিন্তায় দারিদ্র ও প্রগতি’ প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫১ সালে জামালপুরে জন্ম নেয়া আতিউর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়া শেষ করে ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি করেন। বিআইডিএসের গবেষক হিসেবে কাজের পর পালন করেছেন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। ২০০৯ সালের ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেন আতিউর রহমান।

মনিরুজ্জামান : ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘদিন। ভাষা, সাহিত্য ও ফোকলোর বিষয়ে ২৭টি বই ও শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তার। কর্মজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি এবং কলা অনুষদের ডিনের দায়িত্ব ছাড়াও নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন মনিরুজ্জামান। ১৯৪০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা মনিরুজ্জামান গত শতকের ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়ার পর ভারতের মাইশুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। ‘লিঙ্গুইস্টিক সোসাইটি অভ ইন্ডিয়া, ‘দ্রাবিড়িয়ান লিঙ্গুইস্টিক অ্যাসোসিয়েশান’, ‘ফিলোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশান অভ গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘের আজীবন সদস্য তিনি।

আবদুস সেলিম : অনুবাদে এ বছরের বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ড. আবদুস সেলিম ১৯৪৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজি ভাষা ও ভাষাতত্ত্বের এই অধ্যাপক কাজ করছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বের্টোল্ড ব্রেখটের নাটক ‘গ্যালিলিও, ‘হিম্মতী মা’, ‘গোলমাথা চোখামাথা’ এবং তিন খণ্ডে সমাপ্ত ‘অনুবাদ নাটক সমগ্র’আব্দুস সেলিমের উল্লেখযোগ্য অনুবাদগ্রন্থ। বাংলা একাডেমি থেকে ড. সেলিমের দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের নিয়ে লেখা ‘ভায়োলেটড ইন সেভেনটি ওয়ান’ বইটি গবেষণামূলক। আরেকটি হল- ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশনারি।

তাজুল মোহাম্মদ : কৃষি বিভাগে চাকরির পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের তৃণমূলের ইতিহাস সংগ্রহ ছিল তাজুল মোহাম্মদের নেশা। এক সময় তিনি সেসব ইতিহাস লিখে রাখার তাগিদ অনুভব করেন এবং সিলেটের বালাগঞ্জের বুরুঙ্গা গ্রামে ৮১ জনকে গণহত্যার একটি ঘটনা সংগ্রহ করে পাঠান স্থানীয় একটি পত্রিকায়। ১৯৮০ সালের জুলাই মাসের কথা সেটি। পরের দুই যুগে হাজার হাজার শহীদের নাম-ঠিকানা, তাদের বীরত্বের কাহিনী এবং পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বর্বরতার নানা ঘটনার কথা তিনি তুলে এনেছেন গ্রাম বাংলার পথে পথে ঘুরে। বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনাগুলো নিয়ে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় তাজুল মোহাম্মদের প্রথম  বই ‘সিলেটে গণহত্যা’। এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘সিলেটের যুদ্ধকথা’, ‘একাত্তরে সিলেট: স্মৃতিকথা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের খোঁজে’, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সন্ধানে’ এবং ‘কুরুক্ষেত্রী সেনা ১৯৭১’। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার সন্তান তাজুল মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে বই লিখেছেন।

ফারুক চৌধুরী : সাবেক কূটনীতিবিদ ফারুক চৌধুরীর লেখায় বার বার উঠে এসেছে দীর্ঘ কর্মজীবনের নানা অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন দেশ আর সময়ের নানা ঘটনার বিশ্লেষণ। স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবিষয়ক বই ছাড়াও তার হাত দিয়ে বেরিয়েছে এ দেশের ইতিহাস ও অর্থনীতি নিয়ে বেশ কিছু লেখা। ১৯৩৪ সালে আসামের করিমগঞ্জে জ্ন্মগ্রহণ করা ফারুক চৌধুরীর পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরে পড়ার সময়ই তিনি পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন।

মাসুম রেজা : কুষ্টিয়া শহরে নাটকের দল বোধনের মাধ্যমে কৈশোরেই নাটকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় মাসুম রেজার৻ এরপর পরিচয় ঘটে নাট্যকার সেলিম আল দীনের লেখার সঙ্গে৻ সেলিম আল দীনকে অনুসরণীয় মেনেই নাট্যকার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মাসুম।
মাসুম রেজার লেখা ঊল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটকের মধ্যে রয়েছে বিরসা কাব্য, নিত্যপূরাণ, আরজ চরিতামৃত, জল বালিকা, শামুকবাস’।

শরীফ খান  : পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশেষঞ্জ শরীফ খানের দীর্ঘ গবেষণার ফল ‘হালতি পাখির বাসা’ ও ‘বড় হালতির ছানা’ শীর্ষক দুটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকাশিত আট খণ্ডের শিশু বিশ্বকোষের অন্যতম প্রদায়ক। পরিবেশ ও বণ্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইইউসিএন প্রকাশিত পাখি ও বন্য প্রাণী বিষয়ক ‘রেড ডাটা বুক’ এর প্রকাশনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে শরীফ খানের।

সুজন বড়ুয়া : সুজন বড়ুয়ার জন্ম চট্টগ্রামের ফটকছড়িতে, ১৯৫৯ সালে।  ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘আকাশ আমার আয়না’, ‘আকাশ আমার সাগর আমার’, ‌’কিশোর প্রবন্ধসমগ্র’, ‘দেবতার রাজ্যে ছেলেটি’সহ অর্ধশতাধিক বই। শিশু একাডেমি থেকে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত ‘শিশু-বিশ্বকোষ’ ও ‘ছোটদের বিজ্ঞানকোষ’-এর ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সহযোগীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশু-গ্রন্থমালা’ কর্মসূচিরও সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।

হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top