সকল মেনু

খুড়িয়ে খুড়িয়ে-ই চলছে কার্যক্রম; চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

unnamed এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: দ্বীপজেলা ভোলা সারাদেশ থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ জেলার মানুষরা বিশেষ করে চিকিৎসা সেবাসহ শিক্ষা, যোগাযোগ, সাংস্কৃতি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরায় নানান সমস্যা পরছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর রাত ৮টার পর থেকে ভোলা জেলার বাহিরে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কোন মানুষ গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পরলে তার প্রাথমিক চিকিৎসার বাহিরে বড় ধরনে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। এ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত মানুষরা অনেক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ থেকে উত্তরণের জন্য ভোলা আধুনিক হাসপাতালকে ২শ’ ৫০ শয্যায় উন্নীত করাসহ পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।
সূত্রে জানা যায়, ৭০’দশকের দিকে ৩১ শয্যার মধ্যদিয়ে ভোলা হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যা নিয়ে ভোলা সদর হাসপতালের কার্যক্রম শুরু হলেও ৯৬ সালে তা ১শ’ শয্যায় উন্নিত হয়। কিন্তু বাস্তবে ১শ’ শয্যার কোন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চিকিৎসক সঙ্কটে আছে হাসপাতালটি। পর্যায়ক্রমে তা ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসকের পদ দিয়েই চলছে ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। জেলায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম  ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে দরিদ্র রোগীরা। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার ২০ লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, হাসপাতালটিতে ১শ’ শয্যা থেকে ২শ’ ৫০ শয্যায় উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে বটে; কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে মেডিক্যাল অফিসারসহ ২২টি পদের বিপরীতে মাত্র ৭ চিকিৎসক দিয়ে ভোলা সদর হাসপাতাল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে-ই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। শুধু সদর হাসপাতালই নয়, চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে ৬ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতেও। ভোলার সুশীল সমাজ মনে করছেন হাসপাতালগুলোর এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটাই পথ। আর তা হলো ভোলার ২০লাখ মানুষের জন্য ভোলায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। তাহলে হয়তো ভোলার মানুষের কিছুটা হলেও চিকিৎসা সেবার দুর্ভোগ থেকে সাধারণ মানুষ রেহাই পাবে।
পর্যাপ্ত ডাক্তার না থকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিভিল সার্জণ ডাঃ ফরিদ আহমেদ বলেন, ভোলা নদীমাতৃক এলাকা হওয়ায় এখানে ভালো মানের ডাক্তাররা তেমন আসতে চান না। আর যারা আসেন তারা কিছুদিন পর তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে যান। যে পরিমান ডাক্তার প্রয়োজন তা না থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ভোলায় যদি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়, তাহলে চিকিৎসক সংকট আর থাকবে না এবং এখানকার রোগীরা উন্নত সেবা পাবে।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক সংকটের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসক পেলে এখানকার সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনে করছেন তিনি।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। অথচ ভোলায় একটি উন্নত ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা। এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাণিজমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক, পানি সম্পদ উপ মন্ত্রী আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব, নুরনবী চৌধুরী শাওন এমপি, আ’লীগে উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়নসহ ভোলা অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে’র কর্তৃপক্ষ ও মানমীয়  প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে ভোলাবাসির প্রাণের দাবী ভোলায় মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ চালু করার পদক্ষেপ গ্রহন করবেন এ প্রত্যাশা ভোলার জনগনের।
দ্বীপজেলা হওয়ায় ভোলার মানুষরা রাত ৮টার পর কোন জেলার সাথে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে স্থল পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলে হয়তবা রুগীদের নিয়ে বরিশাল বা ঢাকা উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু তা না থাকায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরতে হয়। তাই ভোলায় মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় চালুর দাবীর স্বপক্ষে ভোলার সুশীল সমাজ মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা হলেন, কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, জাসদ সভাপতি এডভোকেট শাহজাহান, ন্যাপ সদস্য এডভোকেট অপরেশ মিশ্র, ছাত্র ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক রিয়াজ প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তরা ভোলা মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ভোলায় মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবী জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top