সকল মেনু

বিদ্রোহী কবির দর্শন

শরীফ সাথী: আমার চোখে যে আলোর আবির্ভাব থেকে দেখা। সে দেখা থেকে আমি বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় জ্যৈষ্ঠের মধুক্ষণে প্রদ্বীপ হয়ে আসা উজ্জ্বল নক্ষত্রের জ্যোতির্ময় আলো হয়ে ধরনীর বুকে বিকোশিত হয়ে ফোঁটা যেন..বিশ্ব দরবারে বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রাম্য নামটি ফুঁটফুঁটে হাসিতে হেসে থাকা চিরকালিন।
২। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় “বয়স মাত্র আট” পিতা হারানো কষ্ট-বেদনা ব্যথা যন্ত্রনা সহেও মক্তবের ছাত্র হয়ে দশ বছর বয়সে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলওয়াতে পারদর্শি যেন..ইসলামী আদর্শে বেড়ে ওঠা। দুঃখ অভাব অনটনে গড়ে উঠা জীবন যাপনের মায়া চিত্র গাঁথা।
৩। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় ছোট্ট বয়সেই রুটির দোকানে কামলা খেটে আহার যোগানো। ব্যথায় ভরা দুখু নামের ছেলেটি তাঁর লেখা সত্ত্বার উন্মেষ ঘটাতে যেন..শুধু মাত্র বার বছর বয়সেই গ্রাম-বাংলার সুপরিচিত লেটোগানের দলে যোগ দিয়ে তাঁর লেখনী চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশের জাত চিনিয়েছিলেন।
৪। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় প্রিয়মুখ, প্রিয়জন, প্রিয় নাম কাজী নজরুল ইসলাম। দুখু নামে ডাকা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অশান্ত ঢেউ নিয়ে বিদ্রোহী মনোভাবে লেখা যেন..বারবার অপলক চেয়ে দেখা। ঢেউ খেলানো কেশ, উত্তাল তরঙ্গ বাঁধভাঙ্গা লেখনির পরিবেশ; যে দেখার হয়না কখনো শেষ।
৫। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় ছোট্ট বয়স থেকেই সাহিত্যের প্রতিটি শিখায় জ্বলে একের পর এক নব নব উদ্দীপনাময় জাগরণের লেখায় সকলকে জাগিয়ে তোলা যেন.. তদানিন্তন ব্রিটিশের ঘোলা জল থেকে বাঙালিদের মুক্ত করার জন্য, নির্মম পরিহাস থেকে উত্তরণেএক একটি কালজয়ী বিদ্রোহীমূলক
সাড়া জাগানো আলোড়ন সৃষ্টিকারি ক্ষুরধার বজ্রলেখার দূর্দান্ত দাপট।
৬। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় ছন্দময় আনন্দময় আবেগময় গানের কথা মানের কথা
প্রাণের কথা জ্ঞানের কথা যেন..নিপেড়িত মানুষের সাহস যোগানো বৈপ্লবিক কথা।
৭। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় তাঁর রঁচিত গজলে মুসলিম সম্প্রদায়ের জাগরণ। তাঁর রঁচিত শ্যামা সঙ্গীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জাগরণ যেন..বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন।
৮। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় সকল অশোভন আগ্রাসন থেকে মুক্তিলাভে বীরঙ্গণে বীর বাহুবলে অর্জিত রূপ নিয়ে জনগণকে স্বহস্তের লেখনী দিয়ে, মনন শক্তি দিয়ে যেন..ভক্তির সাথে বাঙালিকে একাগ্রতা করে গড়ে তোলা দূর্গ। শান্তির নীড় খুঁজে দেওয়া।
৯। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায়, হৃদয়পটে সমগ্র অস্থি মজ্জায় একটি অন্য রকম অধ্যায়। মিষ্টি করে সৃষ্টি করে বিরাজ করে যেন..আবহমান ধারায় চলে অবিরাম।
১০। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় তাঁর রঁচিত এক একটি কাব্যিক ছন্দশীল চেতনা উদ্বেলিত করে আলোচিত করে আলোকিত করে আলোড়িত করে জীবন্ত সত্ত্বায় যেন..আমরণ জাগরণ করে।
১১। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় জাগ্রত করে শোষিত বঞ্চিত নিপেড়িত লাঞ্চিত নির্যাতিত
পদতলেপৃষ্ঠ মানুষের যেন..জীবন যাপনের চিত্রকল্পের বাস্তবতার গল্পকথা।
১২। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় সামাজিক মানবিক দিকগুলো নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় নিখুঁতভাবে ফুঁটানো সমগ্র সাহিত্য সাধনা যেন..চেতনায় পরিস্ফুটিত পুষ্পের বিকাশ ঘটানো, প্রকাশ ঘটানো সুঘ্রাণের প্রাণের আবেশে, ভালবেসে মিশে মিশে হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির মনণে চক্ষুর দৃষ্টি খোলা সুফসলের বৃষ্টি।
১৩। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ধূমকেতুর মহাপ্রলয় আঁধারে অগ্নিশিখার জ্বলন্ত প্রদীপ ন্যায়ের, স্ব-পথের দিক-নির্দেশনার। উঁচুতে উঠানো তর্জনী যেন..
নতুন উদ্যমে নতুন দিগন্তের শান্তির প্রতিক।
১৪। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় ধ্যান-জ্ঞান, সাহিত্য-সাধনা আরাধনা, প্রার্থনা দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, ঈশ্বর প্রেমের যেন..বস্তুনিষ্ঠ লেখনির সতেজ মজবুত শেকড় উৎসাহি অনুপ্রেরণার বন্ধন।
১৫। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় নারী-পুরুষের সম-অধিকারের সুষম বন্টন। নেই কোন বিভেদ। জাতি বর্ণ ধর্ম কর্ম সব মানুষ এক যেন.. মনুষত্বের অম্লান নিদর্শন। চাওয়া পাওয়া আশা-আকাঙ্খার সুস্থ সুষ্ঠ প্রতিফলন।
১৬। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় দু’টি চোখে স্বর্নালী স্বপ্ন দিতে, দু’ঠোঁট ভরে হাসি দিতে, মনে প্রাণে শিহরণে দোলা দিতে, মায়া দিতে ছায়া দিতে ছোঁয়া দিতে যেন..পরস্পরের প্রতি সহানুভুতিশীল মনোভাব বজায় থাকে। সবাই সবাইকে আপন করে রাখে।
১৭। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় সত্যকে সত্য মিথ্যাকে মিথ্যা বলা। দিকভ্রষ্ট না হয়ে সামনে এগিয়ে চলা। আপোষহীন লেখা যেন..দু’চোখ ভরে দেখা। ভাবনার সাগরে ডুবে থাকা।
১৮। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় শিশুদের কথা, কৈশরের কথা, যৌবনের উদাত্ত্ব আহ্বানের তেজদৃপ্ত কথা, কুলি মজুর শ্রমিকের কথা যেন..জীবন সংগ্রামে দুরন্ত-দূর্বার পথ অতিক্রম করার কথা, গণ মানুষের জাগরণের কথা।
১৯। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা বিশ্ময়কর প্রতিভা বিকাশ থামাতে পারিনি। জালেম শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার। কারগার জীবন, সৈনিক জীবন, সাংসারিক জীবন, দেশ প্রেমিক জীবন,কবিতা,গল্প, উপন্যাস,নাটক, গান, গজল সাহিত্য জীবন যেন..অমর হয়ে আছে আমাদের চোখে বাঙালির চোখে বিশ্ববাসির চোখে।
২০। বিদ্রোহী কবির দর্শন থেকে যা দেখতে পায় নির্বাক চাহনীর মায়া দৃষ্টি। জগত্তারিনী পদক, জাতীয় কবির মর্যাদা। একুশে পদক, সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধী। পি.জি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস । বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে চিরশায়িত–যেন..অনুভবে অনুভূতির হৃদস্পন্দনে তোলপাড়। কালজয়ী লেখনির কালজয়ী মানুষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top