সকল মেনু

ডাক্তারদেরএকটু সংযত হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

হটনিউজ ডেস্ক: দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের অপ্রতুলতার বাস্তবতা স্বীকার করে ডাক্তারদের একটু সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের একটু সংযত হতে হবে। দিনের বেলা সরকারি চাকরি করবেন। আর রাতে গিয়ে প্রাইভেট করবেন, তারপর তো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনারা একটু হিসেব করে, যতটা ধারণ করতে পারেন, ঠিক ততটাই করবেন।’

চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মানুষকে সেবা দেওয়ার মনোভাবটাই সব থেকে বড় কথা। কাজেই আমাদের নার্স, ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট যারা, তাদের মনে সবসময় এই কথাটাই থাকতে হবে–মানুষ যখন রোগী হয়ে আসে, তখন ওষুধের থেকেও ডাক্তার নার্সদের ব্যবহার, তাদের কথাবার্তা এবং তাদের সহানুভূতিশীল মনোভাব থেকেই কিন্তু অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। আর আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধটা–এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’

শনিবার (১২ মে) সকালে রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এনআইএএনইআর) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।অসুস্থ হলেই বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধে দেশে আধুনিক প্রযুক্তিসম্বলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও নিখুঁত রোগ নির্ণয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বিষয় আমরা দেখি রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনসিস) ব্যাপারে কেন যেন কোথায় একটা বিরাট ভুল হয়ে যায়। যদিও যন্ত্রপাতি এখন অনেক উন্নত। তবে, সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে।’

দ্ক্ষ জনবল গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে কী করতে হবে, আমার মনে হয় আপনারা সেভাবেই ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা উদ্যোগ নিয়ে কী করতে হবে বলেন, করে দেবো। কোনও অসুবিধা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টার সুরাহা হওয়া দরকার। নইলে আমাদের একজন কেউ রোগী হলেই দৌড়াতে হবে সিঙ্গাপুর, দৌড়াতে হবে ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, অমুক জায়গায়, কেন? তারা ভালোভাবে যদি পারে, আমরা কেন পারবো না। এই প্রশ্নটাই বারবার আমার মনে হয়।

ওইসব দেশের সমমানের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরও পারতে হবে। সমমানের সমমর্যাদার চিকিৎসাসেবা আমরাও দিতে পারবো। সেই অভিজ্ঞতা, সেই শক্তিটা আমাদের অর্জন করতে হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা সংস্থা কোইকার সহ-সভাপতি কিয়াংগুন সুল, কোইকার সাউথ এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়ো ইয়ং কিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান স্বাগত বক্তৃতা করেন।

চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সরকার হাসপাতাল করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসব হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটা কিন্তু এখনও আমাদের উন্নত হয়নি। এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নইলে রোগ ছড়াতেই থাকবে। এটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।’

অনুষ্ঠানে মুগদায় নার্সিং ইনস্টিটিউট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে একটি মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী দাবি তুললে প্রধানমন্ত্রী তাকেই সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আহ্বান জানান। বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এখন বেসরকারি খাতটাকে উন্মুক্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এখানে বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে সবরকম সহযোগিতা করবেন বলেও জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসা সেবায় নার্সিং একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সেবা হওয়া উচিত বিশ্বমানের। এ দর্শন থেকেই ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরের সময় আমি কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসের উন্নয়নে সহযোগিতার অনুরোধ জানাই। কোরিয়া সরকার কোইকার মাধ্যমে বাংলাদেশে নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মাস্টার্স ইন নার্সিং ও নার্সিং এর বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ কোর্স চালু করা হয়।’এজন্য প্রধানমন্ত্রী কোরিয়া সরকার এবং কোইকাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, তার সরকার জাতির পিতার দর্শনকে ধারণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত ৯ বছরে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত নার্স ও চিকিৎসকের অনুপাত ২:১ অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে নার্সদের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। বিদ্যমান ৭টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে কলেজে এবং নার্সিং পরিদফতরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে।

নার্স এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে সরকারের নানা পদক্ষেপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের বয়সসীমা ৩৬ বছর করা হয়েছে। ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সসহ ব্লেন্ডেড ওয়েব-বেইজড মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম অন সেক্সুয়াল, রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস কোর্স চালু করা হয়েছে এবং ২০ তলা বিশিষ্ট নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৪৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও ৫ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং প্রায় ১ হাজার ২০০ জন মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সরকার গত ৯ বছরে নতুন ১৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে এবং আরও ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী ১২ মে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক মহীয়সী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্মদিন হওয়ায় তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ হওয়ায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘আজকে স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা মনে করি বিশ্ব দরবারে একটা উচ্চমর্যাদা পেয়েছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে এখন আমরা অবস্থান করছি।’ জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top