সকল মেনু

চিরিরবন্দরে কৃষককে ফুঁসলিয়ে কৃষি জমির মাটি ইটভাটায়

চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: চিরিরবন্দর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন যার আয়তন ৩১ হাজার ২৮৫ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ হচ্ছে ২৫ হাজার ৩শ ৯২ হেক্টর। উপজেলায় ইটভাটার পরিমান ৩৫টি নির্মানধীন ২টি। উপজেলার ইটভাটাগুলোতে প্রতি মৌসুমে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি পিচ ইট। এই ইট উৎপাদনের জন্য পোড়ানো হচ্ছে প্রায় ১ কোটির বেশী সিএফটি মাটি। সিংহভাগ মাটি আসছে কৃষিজমি থেকে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে কিংবা ফুঁসলিয়ে কৃষিজমির মূল্যবান অংশ ‘টপ সয়েল’ হিসেবে পরিচিত মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাভাবে জমির মালিকরা স্বল্পমূল্যে জমির উর্বর মাটি ইটভাটা ও গৃহ নির্মাণে বিক্রি করায় উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগের ধারণা। কিন্তু বাস্তবে ৮০ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে বলে গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে ইটভাটার চাহিদা মেটাতে কৃষিজমির গুরুত্বপূর্ণ অংশের এমন বিনাস হলেও এ নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া নেই সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের। ফলে কৃষিজমির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদনের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে কৃষি অর্থনীতি ও পরিবেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।


অথচ ইটভাটার সর্বশেষ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি ভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষক ও কৃষি বিভাগ, ইটভাটা মালিকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কৃষিজমির টপ সয়েল নিয়ে উদ্বেগ সম্পর্কে ধারণা নেই কৃষকদের। জানাগেছে, গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা অর্থাভাবে, আবার কেউ কেউ সচেতনতার অভাবে ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। সামান্য প্রয়োজনে বা কোনো প্রয়োজন ছাড়াই মাটির উপরিভাগ তুলে দিচ্ছেন ভাটা মালিকদের কাছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল ধারণা থেকেও তারা মাটি বিক্রি করছেন।
ইটভাটায় টপ সয়েল বিক্রি নিয়ে চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, মূলত কৃষকদের ফুঁসলিয়ে কিংবা ভুল বুঝিয়ে জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ঠিকাদাররা। কোথাও কৃষককে বোঝানো হয়, জমি উঁচু, সেচের পানি নেমে যাবে, বোরো আবাদ হবে না। তাই ওপর থেকে মাটি ভাটায় বিক্রি করে দেয়া ভালো। কোথাও বলা হয়, উপরের মাটিতে ভাইরাস-ময়লা। উপরের মাটি বিক্রি করে নিচের ‘ভালো’ মাটিতে চাষ করলে বেশি ফসল হবে। এভাবে নানাভাবে কৃষককে বিভ্রান্ত ও প্ররোচিত করা হয় টপ সয়েল বিক্রির জন্য। আর এ কাজে সক্রিয় রয়েছে ইটভাটা মালিকসহ ভাটায় মাটি সরবরাহকারী কন্ট্রাক্টররা।
চিরিরবন্দর ইট প্রস্তুতকারীদের তথ্য অনুযায়ী, গড়ে ভাটাপ্রতি ৬০ লাখ হিসেবে উপজেলায় ৩৫ টি ইটভাটা থেকে প্রতি মৌসুমে প্রায় ২১ কোটি ইট উৎপাদিত হয়। আর এ জন্য প্রতি ভাটায় ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার ট্রাক মাটি দরকার হয়। মাটি পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটির বেশী সিএফটি।
ইটভাটার সর্বশেষ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি ভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এ উল্লেখ রয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যাহাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করবার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসাবে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’ এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান বলেন, ফসলি জমির উপরি ভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি উর্বর। এ মাটির সাথে জৈব উপাদান রয়েছে। ফসলি জমিতে ৫ শতাংশ জৈব সার থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে আছে মাত্র ১ শতাংশ। ফসলি জমির মাটি এভাবে বিক্রি হয়ে ইটভাটায় গেলে আগামীতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।
এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: গোলাম রব্বানী বলেন, গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা অর্থাভাবে, নগদ টাকার আশায় তারা মাটি বিক্রি করছেন। মাটি বিক্রি করে সাময়িক অভাব দূর হলেও আখেরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে তাদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top