সকল মেনু

বিদেশী নাগরিক হত্যাঃ হুমকির মুখে পর্যটন খাত!

হুমকির মুখে পর্যটন খাত!
হুমকির মুখে পর্যটন খাত!

০৭ অক্টোবর ২০১৫, নিরাপদ নিউজ : পর্যটন খাত চাঙ্গা করতে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকের আগমন বাড়াতেও নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ।

তবে বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় এ খাত হুমকির মুখে পড়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে বাতিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিদেশী পর্যটকদের বুকিং। এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেলগুলোর বিদেশী পর্যটক ও বিজনেস ট্রাভেলারদের অনেক আগাম বুকিং।

গত দুই বছর পর্যটন মৌসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এতে মন্দার কবলে পড়ে দেশের পর্যটন খাত। ওই সময় বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। চলতি বছর এ ধরনের সংকট না থাকায় গত ছয় মাসে বিদেশী পর্যটকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বুকিং পায় ট্যুর অপারেটরগুলো।

এরই মধ্যে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ভ্রমণ শুরু করছেন অনেক বিদেশী পর্যটক। তবে সম্প্রতি ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিকের হত্যাকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও জাপান তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে। ফলে এ মৌসুমেও বিদেশী পর্যটকদের আগমনে ভাটা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক তৌফিক রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনা দুটি এখনো দেশের পর্যটন খাতে সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। এ মুহূর্তে দেশে যেসব বিদেশী পর্যটক অবস্থান করছেন, তারাও সে রকম আতঙ্কিত নন। পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণের স্পটগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজর রাখছে।

তিনি জানান, সামনের দিনগুলোয় যেসব বিদেশী পর্যটকের আসার কথা রয়েছে, তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। ট্যুর অপারেটরদের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পর্যটন খাত চাঙ্গা করতে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা ১০ লাখ এবং এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে পর্যটন শিল্পে সরকারের বৈদেশিক আয় ৪ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১০ সালে এ শিল্পে আয় ছিল ৫৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা ২০১৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে ৬২০ কোটি ১৬ লাখ, ২০১২ সালে ৮২৫ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০১৩ সালে ৯৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে সরকারের।

বিদেশী পর্যটকের বুকিং প্রসঙ্গে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান মার্কেট এন-ট্রেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ সাফাত উদ্দিন আহমেদ তমাল জানান, আগামী নভেম্বরে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৬ জনের একটি জার্মান পর্যটক দলের উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলায় ভ্রমণের বুকিং রয়েছে।

তারা এখনো নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। তবে আগামী ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়া থেকে ১৯ জন পর্যটকের একটি গ্রুপের বুকিং রয়েছে; যারা ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে নিরাপত্তার অজুহাতে কক্সবাজারের হোটেলগুলোয় অগ্রিম রুম বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন বিদেশী নাগরিকরা। এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দলসহ অন্তত ২০০ বিদেশী নাগরিক বুকিং বাতিল করেছেন বলে হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের জন্য ১৫-৩০ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেল ওশান প্যারাডাইসে বুকিং ছিল। তবে গতকাল তা বাতিল করে দেয়া হয়।

হোটেল ওশান প্যারাডাইসের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) খায়রুল আনাম জানান, বিদেশী নাগরিকরা তাদের ভ্রমণের মেয়াদ কমিয়ে হোটেল ত্যাগ করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের জন্য ১৫-৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২০টি রুম বুকিং ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে গতকাল তা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া হোটেল লং বিচে বুকিং বাতিল করেছেন জাপানের কয়েকজন নাগরিক। তাদের নামে ৪৫টি কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা ছিল। একটি প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে তাদের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল।

কিন্তু তাদের দেশের এক নাগরিককে হত্যার পর গতকাল তারা বুকিং বাতিল করেন বলে জানান ওই হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক কর্মকর্তা ইমরান হোসেন। তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) একটি প্রতিনিধি দলের জন্য ২০টি কক্ষ বুকিং ছিল। সেটিও বাতিল করা হয়েছে।

হোটেল সি-গালের প্রধান নির্বাহী শেখ ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী রুমি জানান, বর্তমানে কোনো বিদেশীর অগ্রিম রুম বুকিং না থাকলেও ঈদের পর প্রতিদিন কোনো না কোনো বিদেশী হোটেলে উঠতেন। কিন্তু ইতালীয় ও জাপানি দুই নাগরিককে হত্যার পর হোটেলে আর কোনো বিদেশী নাগরিক আসছেন না।

এ পরিস্থিতি দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন কক্সবাজার হোটেল মালিকদের সংগঠন হোটেল মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি এমএন করিম। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দ্রুত নজর দেয়া দরকার সরকারের। অন্যথায় ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণার লক্ষ্য পূরণ হবে না।’

ঢাকা ও রংপুরে পৃথক ঘটনায় ইতালি ও জাপানি দুই নাগরিককে হত্যার পর পুলিশ সদর দফতর থেকে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে হবে। কোনো অজুহাত তোলা যাবে না। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে। সার্বক্ষণিক চেকপোস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। উচ্চতর ভবনগুলোয় সিসি ক্যামেরা আছে কিনা বা সেগুলো সচল রয়েছে কিনা, তা-ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, মোটরসাইকেলে করে বেশি অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সে কারণে সব ধরনের মোটরসাইকেল নজরদারির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার উদ্যোগ নিতে হবে।

সূত্র জানায়, চিঠি পাওয়ার পর পুলিশ সুপার (এসপি) থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠক করছেন। তারা নিরাপত্তা বাড়াতে যা যা করা দরকার, সেসব উদ্যোগ নিয়েছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, কক্সবাজারে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের সব হোটেলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর জন্য হোটেল মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top