সকল মেনু

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু তদন্তে কমিটি, পুলিশ ক্লোজ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু তদন্তে কমিটি, পুলিশ ক্লোজ
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যু তদন্তে কমিটি, পুলিশ ক্লোজ

টাঙ্গাইল, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : শুক্রবার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ছেলের সামনে মাকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার যেসব পুলিশ সদস্য গুলি ছুড়েছিলেন, তাদের প্রত্যাহারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান জানিয়েছেন।
শনিবার পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) মো. আলমগীর আলমকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান এবং টাঙ্গাইল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম খান।
সৃষ্ট ঘটনা, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং তিনজন মানুষ নিহত হওয়া সম্পর্কে কারণ অনুসন্ধান ও দায়-দায়িত্ব নিরূপণের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুজ্জামান বলেন, সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি, গতকালের ঘটনার সময় যারা গুলি ছুড়ছে, তাদের ক্লোজ করার জন্য।
নিরপেক্ষ তদন্ত করার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্থানীয় পুলিশকে পরামর্শ দেন।
নিহত শামীম (৩২), ফারুক (৩৫) ও শ্যামল দাসের (১৫) ময়নাতদন্ত শনিবার টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হয়েছে।
ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনজনই বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
সংঘর্ষের পর একদিন পরও কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড ও পাশ্ববর্তী হামিদপুর বাজার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
কালিহাতী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকেই বাসস্ট্যান্ড ও হামিদপুর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ায় অভিযোগ এনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার দুপুরে কালিয়া গ্রামের শামীম, কুষ্টিয়া গ্রামের ফারুক ও সালেঙ্কা গ্রামের শ্যামল দাসের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহতদের পরিবারে চলছে কান্নার আহাজারি। প্রতিবেশীরাও এসে সমবেদনা জানাচ্ছেন।শামীমের মা আমেনা খাতুন বলেন, জুমার নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় শামীম। আর ফিরে আসেনি।
ঈদের পর শামীমের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার ছেলে তো মিটিং-মিছিলে যায়নি। তবে কেন তাকে পুলিশ গুলি করল? আমি বিচার চাই।”
স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শামীমের স্ত্রী বিথী। দুই সন্তান বাদল (৮) ও মীমকে (২) নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তিনি।
এদিকে দোষীদের শাস্তি দাবি করে প্রতিবেশীরা বলছে, শামীম সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন।
কুষ্টিয়া গ্রামে ফারুকের বাড়িতে প্রতিবন্ধী ছেলে আসিফকে (৮) নিয়ে কান্নাকাটি করছেন স্ত্রী আসিয়া বেগম। পাশেই বসে আছে তাদের মেয়ে ফাতেমা (৩)। প্রতিবেশীরা জানান, মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়েই ভ্যানচালক ফারুকই সংসার চালাতেন।
একই  অবস্থা নিহত শ্যামল দাসের (১৫) সালেঙ্কা গ্রামের বাড়িতেও। একটি সেলুনে কাজ করত সে। তিন ভাইয়ের মধ্যে শ্যামল ছিল সবার বড়। সন্তান হারিয়ে কাঠমিস্ত্রী বাবা রবি দাস পাগলপ্রায়, মা ভারতী রানী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার জেলা প্রশাসন বহন করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top