সকল মেনু

ইবির আল ফিকহ বিভাগ মাস্টার্স শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ১০ বছরেও শেষ হয়নি

images (2)কাঞ্চন কুমার,কুষ্টিয়া:কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা সেশনজটের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে বছরের পর বছর। গুটি কয়েক বিভাগ বাদে অধিকাংশ বিভাগেই দুই থেকে পাঁচ বছরের সেশনজট লেগেই থাকে। সেশনজটের দিক দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে আল-ফিকহ বিভাগে বর্তমানে ১০টি ব্যাচ রয়েছে। ১০ বছরেও মাস্টার্স শেষ করতে না পারায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ভয়াবহ সেশনজটের জন্য তারা বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল, কতিপয় শিক্ষকের চরম স্বেচ্ছাচারিতা, বিভাগীয় সভাপতির অদক্ষতা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ি করেছেন। ইবি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আইন ও মুসলিম বিধান, ইংরেজি, বাংলা, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, অর্থনীতিসহ আরও কয়েকটি বিভাগে দেড় থেকে আড়াই বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। তবে, আল-ফিকহ বিভাগের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। জানা গেছে, ২০০৩-০৪ সেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও শরিয়াহ অনুষদের অধীনে আল-ফিকহ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিভাগটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬শ’, ব্যাচ ১০টি এবং শিক্ষক ৮ জন। এরমধ্যে মাস্টার্সের তিনটি, শেষ বর্ষের একটি, ৩য় বর্ষের দু’টি, ২য় বর্ষের দু’টি এবং প্রথম বর্ষের দু’টি। মাস তিনেক আগে ২০০৩-০৪ সেশনের মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এখনও ফলাফল দেয়া হয়নি। ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়নি এখনও। গত ২৬ মে ২০০৬-০৭ সেশনের শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। গত ৯ জুন মাস্টার্স ও ১০ জুন শেষ বর্ষের নির্ধারিত চূড়ান্ত পরীক্ষা কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রয়েছে। এদিকে, ইবির আল-ফিকহ বিভাগের সেশনজটের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিভাগীয় কিছু শিক্ষকের ঠিকমতো ক্লাস না নেয়া এবং খাতা জমা দিতে বিলম্ব করার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে, একাডেমিক কারণে কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুবকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদার ক্লাস পরীক্ষা ঠিকমতো নেন না। অধিকাংশ সময় তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। দুই বছরে মাত্র তিনটি ক্লাস নিয়েছেন। ওই শিক্ষক সম্পর্কে মাস্টার্সের এক ছাত্র বলেন, ‘তিনি দুই বছর আমাদের ক্লাস নেননি। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর তিনি মাত্র দু’টি ক্লাস নিয়েছেন। সেশনজটের নেপথ্যে আরেক শিক্ষকের প্রত্যক্ষ ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে।’ বিভাগের আরেক শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল ওহাব শাহীন সম্পর্কে আরেকজন ছাত্র বলেন, ‘তিনিও ঠিকমতো ক্লাস পরীক্ষা নেন না। মাসের পর মাস খাতা আটকে রাখেন। অথচ, শুনেছি তিনি ঢাকার কয়েকটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে নিয়মিত ক্লাস নেন।’ ওই শিক্ষকের দাম্ভিকতা সম্পর্কে ছাত্ররা বলেন, ‘শাহীন স্যারকে ক্লাসে বলতে শুনেছি তোরা কেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এসে বললেও আমাকে ক্লাস নেওয়াতে পারবেন না।’সূত্র জানায়, বিলম্বে যদিও পরীক্ষা কখনও শুরু হয়, মাসের পর মাস খাতা আটকে রাখেন শিক্ষকরা। ফলে সময়মতো রেজাল্ট দেয়া সম্ভব হয় না। এতে করে সেশনজট বেড়েই চলেছে। বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. নাজিমউদ্দিন এবং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ঠিকমতো ক্লাস না নেয়া এবং দেরিতে খাতা জমা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ড. নাজিম উদ্দিন শিক্ষকতা ছাড়াও ল্যান্ড প্রোপার্টিজ বিজনেসের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। সহযোগী অধ্যাপক নুরুল ইলামের বিরুদ্ধে অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুবকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদারের সঙ্গে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত এক শিক্ষক খাতা দেরিতে জমা দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সুনির্দিষ্ট রুল আছে, যেগুলো মেনেই সব কিছু করতে হয়ে। তাই খাতা জমা দিতে মাঝে মধ্যে দেরি হয়ে যায়।’ এ ব্যাপারে শিক্ষক নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক হযে যাবে।’ এদিকে, বিভাগীয় সভাপতি সহকারী অধ্যাপক হামিদা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নমনীয় এবং সভাপতি হিসাবে তাকে অন্যান্য শিক্ষকরা মান্য করেন না বলে ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। তিনি আমাকে না জানিয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা ভুল হয়েছে বলে নিজে স্বীকার করেছেন। এছাড়া যেসব শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা নেন না এবং দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকেন তাদের ব্যাপারে এখন থেকে নিয়মিত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top