সকল মেনু

নাটোরে অর্থাভাবে আটকে আছে গ্রামবাসীর টাকায় নির্মাণাধীন একটি ফুট ব্রীজ

download (13)মোঃ মাহফুজ আলম মুনী, নাটোর থেকে:নাটোরের গুরুদাসপুরে অর্থাভাবে আটকে আছে গ্রামবাসীর টাকায় নির্মাণাধীন একটি ফুট ব্রীজ। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের উদবাড়িয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা তুলসী নদীর ওপর কোন ব্রীজ না থাকায় সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে গ্রামবাসী নিজেদের চাঁদার টাকায় নির্মাণ করছে একটি ফুট ব্রীজ। ইতিমধ্যেই ব্রীজের আটটি পিলারের কাজ শেষ হলেও টাকার অভাবে আটকে গেছে বাকী কাজ। এরপরেও হাল ছাড়েনি গ্রামের সাধারণ মানুষ। গত ১৪ এপ্রিল ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম ব্রীজটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এসময় উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল মান্নাফসহ গ্রামের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মোট ৫১ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৬ ফুট প্রস্থ চার স্প্যান বিশিষ্ট এই ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রায় ছয় লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে ঠিক করা হয়। এব্যাপারে গত ২ এপ্রিল স্থানীয় খাকরাদহ হাফেজিয়া মাদরাসা মাঠে এলাাকাবাসী একটি বৈঠক ডাকলে প্রায় ৫০জন গ্রামবাসী সেখানে উপস্থিত হন। তারা নিজেদের উদ্যোগেই ফুট ব্রীজটি নির্মানের সিদ্ধান্ত নেন। এই বৈঠকে তাৎক্ষণিক প্রায় এক লাখ টাকা অনুদানের প্রতিশ্র“তি পাওয়া যায়। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলামকে সভাপতি ও রফিকুল ইসলামকে সাধারন সম্পাদক করে মোট ৮০ সদস্য বিশিষ্ট ব্রীজ বাস্তবায়ন নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, কমিটি গঠনের পর প্রথমে এক লাখ টাকা দিয়ে রড-সিমেন্ট ও ইট-বালি কেনা হয়। পরে গুরুদাসপুর এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের সাথে পরামর্শ করে মিস্ত্রি দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। পরে কমিটির সদস্যদের নিয়ে গ্রামে ঘুরে আরো এক লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়। ওই টাকা দিয়েই আটটি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পিলারের ওপরে টপ ¯্যাব ঢালাইয়ের কাজ বাকী রয়েছে। এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাকড়াদহ কবরস্থানের সাথে মরা তুলসী নদীর মধ্যে চার স্প্যানের আটটি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। ব্রীজটির নির্মাণ কাজ এখন থেমে আছে। ওই কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নাফ জানান, আদায় করা টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। এলাকায় ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়ায় গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের কাজও বন্ধ রয়েছে। বর্ষাা শুরু হলে কাজ শুরু করা যাবে না। মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম জানান, মরা তুলসী নদীটি ধারাবারিষা ইউনিয়নের পশ্চিমে দাদুয়া, কচুগাড়ী-খাকড়াদহ আর পুর্বে খাকড়াদহ ও ধারাবাবারিষা গ্রামকে বিভক্ত করে রেখেছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহায়। শুকনা মৌসুমে পায়ে হেঁটে পারাপার করা গেলেও বর্ষায় তাদের বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীদের এসময় দূর্ভোগ বেশী বাড়ে। বর্ষার সময় কেউ মারা গেলে কলার ভেলায় করে লাশ কবরস্থানে নিতে হয়। মরা তুলসী নদীর কবরস্থান পয়েন্টে একটি ব্রীজের দাবি নিয়ে গ্রামবাসি স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসসহ সংশিষ্ট দপ্তরে অনেকবার আবেদন করলেও কোন কাজ হয়নি। এবারে নিজেদের প্রয়োজনেই গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে ব্রিজটি নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। তারা জানান, ব্রিজ না থাকায় চলনবিলের উৎপাদিত ফসল বাড়িতে আনতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টিপাত হলে কাদায় পিচ্ছিল হয়ে রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ধারাবারিষার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, গ্রামের মানুষের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ব্রীজটি নির্মাণে তার পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা দেয়া হবে। গুরুদাসপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ব্রীজটির জন্য তার দপ্তর থেকে সংশিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে কিন্তু অনুমোদন মেলেনি তবে গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে ওই ব্রীজটি নির্মাণের উদ্যোগ সবার জন্য ইতিবাচক। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দস বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই তবে সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে ব্রীজ নির্মাণের কাজটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। দেশের সবখানে এ ধরনের কর্মকান্ড শুরু হলে জাতি আরো এগিয়ে যাবে। তিনি উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top