সকল মেনু

তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে ৩৫ ডলারে

1451508880আন্তর্জাতিক ডেস্ক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ৩১ ডিসেম্বর :  জ্বালানি তেলের দাম গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে রয়েছে। দাম কমার চাপে রয়েছে ইস্পাত শিল্প। এর ফলে দেশের ভর্তুকির চাপ যেমন কমেছে, তেমনি পরিবহন খরচও কমবে। যা পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স কমে যাওয়ার আশংকাও করছেন কেউ কেউ।
সর্বশেষ গতকাল বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৫ ডলারে। যা ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আশংকা করছে তেলের মূল্য ২০ ডলারেও নেমে আসতে পারে। মূলত: সরবরাহ বৃদ্ধির কারণেই এমনটি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র তেলের উত্পাদন শুরু করায় বিশ্ববাজারে দাম কমছে। এতে করে উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতিচ্ছেদ ঘটছে। ইতিমধ্যেই সৌদি আরবকে ঘাটতি বাজেট করতে হয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো তথা ইরাক, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েতের মোট রফতানির ৭৫ ভাগ জুড়ে ছিল তেল ও গ্যাস। সৌদি আরবে এবছরের বাজেট ঘাটতি ৯ হাজার ৮শ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। দেশটি পর্যায়ক্রমে নাগরিক সেবার ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথাও বলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের মূল্যের এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের বাজেটে ঘটতি দেখা দিতে পারে। অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে আরব দেশগুলো ইতিমধ্যে নতুন কর আরোপের কিংবা ব্যয় হ্রাসের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে গালফ অর্থনীতির অর্ধেক জিডিপি (মোট দেশজ উত্পাদন) আয় হয়েছিল তেল ও গ্যাসের মাধ্যমে। যদি তেলের দাম এ ভাবে কমতেই থাকে তাহলে এ অঞ্চলে বছরে তেল হতে ২১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো আয় কমে যাবে। যা তাদের সম্মিলিত জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য এক ডলার হ্রাস পায় তাহলে বাংলাদেশের রেমিটেন্স বছরে কমে যেতে পারে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের মতো। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের জন্য বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যদিও অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাসের ফলে বাংলাদেশ সার্বিক বিবেচনায় লাভবান হবে। তেল আমদানি বাবদ বছরে বাংলাদেশকে প্রায় ২শ কোটি ডলার কম খরচ করতে হবে। তাছাড়া তেলের মূল্য কম থাকায় সারের মূল্যও কমে যাবে।  আমদানি খরচসহ সার্বিক খাদ্য পণ্যের মূল্য কমবে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেবেও দেখা গেছে,   জ্বালানির দাম কমায় অন্যান্য পণ্যের মূল্য  কমেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানির দাম ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে গড়ে ৪৩ শতাংশ কমেছে। তেলের মূল্য ছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে দাম তৃতীয় প্রান্তিকে এসে ৫ শতাংশ কমেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের দাম একবছরের ব্যবধানে ১৪ শতাংশ কমবে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিভিন্ন ধাতুর মূল্য হ্রাস পেয়েছে ১২ শতাংশ। এ বছর শেষে ধাতব পণ্যের মূল্য ১৬ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সোনা রূপার মতো মূল্যবান ধাতুর মূল্য তৃতীয় প্রান্তিকে কমেছে ৭ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী কৃষিজাত দ্রব্য মূল্য হ্রাস পেয়েছে ২ শতাংশের বেশি। চলতি ২০১৫ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী কৃষি পণ্যের মূল্য কমবে ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে সারের দাম কমেছে ১ শতাংশের মতো। চাহিদা কম থাকার কারণে সারের দাম ১ শতাংশ কমবে এ বছর।
তবে রেমিটেন্সের প্রবাহ যে নিম্নমুখী তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রায় সব দেশ থেকেই এর প্রবাহ বাড়লেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তা খুব বেশি বাড়েনি। গত বছর ২০১৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৪৯৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। ২০১৩ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। আর তার আগের বছর ২০১২ সালে দেশে ১৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
রেমিটেন্স প্রবাহ নেতিবাচক না হলেও যে হারে রেমিটেন্স বাড়ার কথা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রভাবে সেভাবে বাড়েনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রধান যোগানদাতা দেশ সৌদি আরব থেকে মাত্র ২০ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। একই অবস্থা সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ওমান, বাহারাইন, কুয়েত ও লিবিয়ার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলেছেন, আগের বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যেহারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে তা বাড়েনি।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top