সকল মেনু

রাজশাহীতে আহমদীয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ১, আহত ১৩

1451068169নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৬ ডিসেম্বর :  রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল সৈয়দপুর চকপাড়া আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতি বোমা হামলায় অজ্ঞাত হামলাকারী (২৩) নিহত হয়েছেন।  এ ঘটনায় অন্তত ১৩ মুসল্লি আহত হয়েছেন।  আহতদের মধ্যে তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার জুমার ফরজ নামাজ চলাকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে।  মসজিদটিতে আহমদীয়া (কাদিয়ানী) সম্প্রদায়ের লোকজন নামাজ আদায় করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে মসজিদে আত্মঘাতি হামলার খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পুলিশ সুপার নিসারুল আরিফ, র‌্যাব, পুলিশ, সিআইডি, ডিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার নিসারুল আরিফ বলেন, বোমা বহনকারী যুবককে স্থানীয়রা কেউ চিনতে পারেনি। তার পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সঙ্গে আরো কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মসজিদের ইমাম সৈয়দ গোলাম মোস্তফা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে জানান, ১০/১৫ নারী ও শিশুসহ প্রায় ৬০/৬৫ মুসল্লি মসজিদে জুম্মার ফরজ নামাজ আদায় করছিলেন। দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে যাওয়ার সময় সামনের সারির বাম দিকের এক যুবকের কোমরে বাঁধা বোমাটি প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় সবাই দিগবিদিক ছুটোছুটি শুরু করলে পাশের আহলে হাদীছ মসজিদের মুসল্লিরা এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে।
এ সময় বোমা হামালাকারি অজ্ঞাত যুবক যন্ত্রনায় ছটফট করলেও আরো বোমা বিস্ফোরণের ভয়ে কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে যায়নি। ঘটনার পাচঁ/সাত মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পাশ্ববর্তী মসজিদের মুসল্লিরা জানান, বিস্ফোরণের পরপরই আহমদীয়া মসজিদ থেকে আরেক যুবককে তারা দৌড়াতে দেখেন। ওই গ্রামের চকপাড়া-সৈয়দপুর পাকা সড়কে অপেক্ষমান একটি মোটর সাইকেলে থাকা অপর দুইযুবকের সাথে ওই যুবককে দ্রুত চলে যেতেও দেখেন তারা।
অন্যদিকে বোমা হামলায় আহত মুসল্লিদের মধ্যে মচমইল সৈয়দপুর গ্রামের বলাই তালুকদারের ছেলে ময়েজ উদ্দিন (৪২), মৃত তালুকদারের ছেলে সাহেব আলী (৩৬) এবং মুকুল হোসেনের ছেলে নয়নকে (১২) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এবং বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে ময়েজ ও সাহেবের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো অজ্ঞাত যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশের স্বতন্ত্র বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।
বেলা দুইটার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের ভেতর ছোপ ছোপ রক্ত। পাশেই পড়ে আছে অজ্ঞাত হামলাকারীর লাশ। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ওই যুবকের গায়ে কালো জ্যাকেট ছিল।
স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে স্থানীয় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদটি নির্মাণ করে সেখানে নামাজ আদায় করে আসছেন।
যেভাবে আত্মঘাতী বোমা হামলা
বোমা হামলায় আহত সাহেব আলীর ভাতিজা সান্টু রহমান জানান, চাচা সাহেব আলীর সঙ্গে আমিও মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। ফরজ নামাজের সময় চাচা যে কাতারে নামাজ আদায় করছিলেন, হামলাকারী অজ্ঞাত যুবকও একই কাতারে খুব কাছে নামাজ আদায় করছিলেন। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজের এক রাকাতের পর দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর সময় ওই যুবক তার কোমরে বাঁধা বোমা বের করার সময় সেটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই যুবক ঘটনাস্থলে নিহত এবং অন্যেরা আহত হন। আমি অন্য কাতারে নামাজ আদায় করায় বেঁচে যাই।
তিনি আরো বলেন, মসজিদে ফরজ নামাজ শুরুর আগে অপরিচিত ওই যুবককে স্থানীয় মসুল্লিরা প্রশ্ন করে জানতে পারেন, তার বাড়ি মোহনপুরে। সে রাজশাহী পলিটেকনিকে পড়ে। এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসেছেন। সেখান থেকে মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছেন। জিন্সের প্যান্টের সাথে তার গায়ে ছিল কালো জ্যাকেট। জ্যাকেটের ভেতরে কোমরে বেল্ট দিয়ে বাঁধা ছিল শক্তিশালী বোমা।
এদিকে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ ও স্থানীয় মসজিদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তাদের এক শিক্ষানবিশ ইমাম। সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় থানা থেকে শেষবারের মত ফোন করে সেই শিক্ষানবিশ ইমাম। কিন্তু এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ মিলছে না। ফোনও ছিল বন্ধ। সম্প্রদায়টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে ধারণা করা হয়, তাদের শিক্ষানবিশ ইমামকে পুলিশ আটক করেছে। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top