সকল মেনু

কুড়িগ্রামে নিখোঁজের ৪দিন পর স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার

indexডাঃ জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম শহরের ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের একমাত্র পুত্র আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন (১৪) নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিন পর ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংক থেকে গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কুড়িগ্রাম শহরের ভেলাকোপা এলাকার হানাগর পাড়ার সিনিয়র নার্স মোর্শেদা বেগমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় মোর্সেদা বেগম ও তার পুত্র রিফাতকে পুলিশ আটক করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে ঘিরে রাখে রহস্য ঘেরা ঐ বাড়িটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে লাশ উদ্ধার করার খবরে স্বপের পরিবারে শোকের মাতম  শুরু হয়। গোটা সরদার পারায় নেমে আসে শোকের ছায়া। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন বাবা সুলতান আহম্মেদ ও মা ফরিদা ইয়াসমিন। কোন শান্তবাণি কাজে দিচ্ছে না। শোকাহত স্বজন ও প্রতিবেশীরা শান্তনা জানানোর ভাষাও ভুলে গেছে। সবার চোখে গড়িয়ে পড়ছে পানি। টক টকে ফর্সা, উচা লম্বা মেধাবী স্বপ্ন আর নেই এ কথা ভাবতেও পারছে না কেউ।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মুর্শেদুল করিম মোহাম্মদ এতেশাম জানান, কুড়িগ্রাম শহরের সরদার পাড়ার খাদ্য ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের ২ মেয়ে ও এক ছেলে। গত সোমবার (২১/১২/১৫) সকাল ১০টার দিকে আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন তার মা ফরিদা ইয়াসমিনকে টেবিলে নাস্তা দিতে বলে তিন তলা ফ্লাট থেকে নীচে নামে। বাসায় বলে বন্ধু রিফাতের সাথে কথা বলে আসছি। তার আর ফেরা হয়নি। এরপর থেকে সে নিখোঁজ। তার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭৩১২০৭৬৯৩ বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন খোজা খুজির পর পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করা হয়। নিখোঁজ ঘটনার পর থেকে রিফাতের মা মোর্শেদা বেগম রিফাতের সাথে কাউকে কথা বলতে দিচ্ছিল না। পুলিশের সন্দেহ হলে মা ও ছেলেকে বুধবার রাতে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার সকালে রিফাত আতœগোপন করে। আর মোর্শেদা বেগম ফোন বন্ধ রাখে। বিকালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোর্শেদা বেগম ও পুত্র রিফাতকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বপ্নকে খুনের ঘটনা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যের সুত্রধরে তাদের বাসার ল্যাট্রিনের সেফিিট ট্যাংক ভেঙ্গে স্বপ্নের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ, সহকারি পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও ইউএনও আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে লাশ উদ্ধার এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রাম সদর হাপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোর্শেদা বেগম এক বছর পূর্বে ভেলাকোপার হানাগর পাড়া বাড়ি করে বসবাস করে আসছে। স্বামী আতাউর রহমানকে ৩মাস আগে ডিভোর্স করে। একমাত্র ছেলে রিফাতকে নিয়ে থাকত। তবে ঐ বাসায় কারো যাতায়াত ছিল নিষিদ্ধ। এ বাড়িটি ছিল রহস্য ময়। স্থানীয় আবেদ আলী নামে একজন বাড়িটি পাহাড়া দিত। আর রাবেয়া বেগম নামে এক মহিলা গৃহপরিচালিকার কাজ করতো। এর বাইরে ঐ বাসায় কারো প্রবেশাধিকার ছিলনা।  মোর্শেদা বেগমের গ্রামের বাড়ি নাগেশ^রী উপজেলার রামখানা এলাকায়। তার প্রথম স্বামী রেজাউল মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সর্ব শেষ বিয়ে করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী আতাউর রহমানকে। বিশাল দেহের অধিকারী মোশের্দা প্রায়ই স্বামী আতাউরকে মারধোর করতো। এরই এক পর্যায়ে গ্রামে সালিশের মাধ্যমে ডিভোর্স হয় তাদের। তাদের চলাফেরা, আচার আচরণ সবই ছিল রহস্যময়।
সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) মাসুদ আলম জানান, অভিযুক্ত মোশের্দা ও রিফাত ধুরন্ধর প্রকৃতির। রিফাত তার নাগেশ^রী এলাকার এক বন্ধু আকাশের সহায়তায় এ খুনের ঘটনা ঘটায়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আকাশ নাগেশ^রী থেকে কুড়িগ্রামে আসে একটি জ্যাকেট কিনতে। কিন্তু টাকা নেই। তখন রিফাতসহ বুদ্ধি করে স্বপ্নকে শিকার বানাতে। রিফাত প্রথমে মোবাইলে স্বপ্নকে ডেকে আনে। ফাঁকা বাড়িতে দু’বন্ধু স্বপ্নকে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাদের মুল তাগের্ট ছিল মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু ৫ফিট ১০ ইঞ্চি লম্বা স্বপ্নকে বাগে আতে পারছিনা। চিৎকার-চেঁচামেছি শুরু করলে তারা ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে মাপলার দিয়ে গলা পেচিয়ে ধরলে স্বপ্নের মৃত্যু হয়। পরে অন্যদের সহায়তায় লাশ গুম করতে ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংকে ঢুকিয়ে দেয়।
আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র ছিল। আর ঘাতক রিফাত ছিল কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। দুজনে ছিল ঘনিষ্ট বন্ধু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top