সকল মেনু

ড. ওয়াজেদ আলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের খাদ্যশস্য হরিলুট

কাঞ্চন কুমার,কুষ্টিয়া:কুষ্টিয়া শহরতলীর জুগিয়ায় ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বরাদ্দকৃত ৩২৯টন খাদ্যশস্য কাজ না করেই হরিলুট করার অভিযোগ উঠেছে। একারণেই দেশের একজন প্রথিতযশা ব্যক্তির নামে নামকরণ আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই প্রকল্পের দেখভালে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষের অপকর্ম ঢাকতেই যে জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই জমির মালিক সাজিয়ে হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করিয়েছে। রীটের পরিপ্রেক্ষিত হাইকোর্টে ওই জমি থেকে বালি সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য ইতিমধ্যেই ২৭৫ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য ব্যয় করা হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যার সিংহ ভাগই চলে গেছে প্রকল্প কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষের পকেটে। মোটা বরাদ্দের প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি তদন্ত টিম আসে কুষ্টিয়াতে। তদন্ত টিম প্রকল্প ভিজিট করে কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন নিজে পরিদর্শণ করে কাজের মান দেখে সন্তোষ হতে পারেননি। কাজ দেখে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে গড়াই নদীর তীর সংলগ্ন জুগিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রশাসন। সেই মোতাবেক জেলা প্রশাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয় ২০১১ সালের দিকে। নির্ধারিত স্থানকে সরকারি খাস জমির গর্ত দেখিয়ে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে মাটি ভরাটের জন্য ৩২৯টন খাদ্য শস্যের আবেদন জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২০১১-১২ অর্থ বছরে মাটি ভরাটের জন্য ৭৫ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তিতে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ২০০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য। মাটি ভরাটের জন্য অবশিষ্ট ৪৯ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দের কথা রয়েছে। এদিকে প্রকল্পের কাজে বড় ধরণের দূর্নীতি হওয়ায় হঠাৎ করেই আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেটিকে ব্যক্তি মালিকাধীন জমি দাবি করে হাইকোর্টে রীট আবেদন করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। হাইকোর্টে রীটের কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি প্রকল্পের প্রস্তাবনায়ই সরকারি খাস জমি দেখিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। প্রকল্প কর্মকর্তা তার অপকর্ম ঢাকতেই ওই ব্যক্তিকে দিয়ে এই রীট করানো হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সম্প্রতি জুগিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান পরিদর্শণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প শাখার (ফেস-২) সহকারি প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন। তিনি কাজ দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। মাটি ভরাটের জন্য যে পরিমান খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা থেকে কাজ হয়নি বলে মনে করেন তিনি। এব্যাপারে মাহমুদ হোসেন জানান, এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের অনুকুলে ২৭৫টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ এখনো অনেক বাকি আছে। মাটি ভরাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিতে বালি পাওয়া গেছে। সে বালি গড়াই নদীর ড্রেজিংয়ের বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। রীটের ব্যাপারটি তার জানা নেই। কাজের মান নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে। সেখানে বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এখানে তেমন কোন মাটি ভরাটের কাজ তারা দেখেননি। যে বালি রয়েছে সেটি গড়াই নদীর ড্রেজিংয়ের বলে তারা জানান। গড়াই নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদ বলেন জুগিয়াসহ আরও কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে বালি ফেলা হয়েছে। এ কাজের মান তদারকির জন্য কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা পিআইও তপন কুমার ঘোষ সহ যাদের ওপর দায়িত্ব ছিল তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব সরকারি কর্মকর্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এদিকে গত দুই অর্থ বছরে কাজ না করেই খাদ্য শস্য উত্তোলণের কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বছর বাকি ৪৯ টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ না দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top