সকল মেনু

নরসিংদীতে বানের পানির মত ঢুকছে অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্র

Narsingdi Photo-2শেখ আঃ জলিল নরসিংদী: নরসিংদী জেলা শহরসহ সারা জেলার অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে বানের পানির মত ঢুকতে শুরু করেছে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে র‌্যাব-১১ ঘোড়াশাল চৌরাস্তার মোড় থেকে ৭টি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন ও ৪২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আতিকুর রহমান আতিক, মমিনুর রহমান মমিন ও বিল্লাল হোসেন নামে ৩ জন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে। র‌্যাব-১১ নরসিংদী ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার মেজর আরিফ হোসেন ও এএসপি ওয়ারেস উদ্দিন’র নেতৃত্বে এ বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৩ জুন ২৪ ঘন্টায় ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর ৩ দিনের মাথায় অস্ত্রের এই বৃহৎ চালানটি ধরা পড়ে। এছাড়া নরসিংদী শহর এলাকার পুড়ানপাড়া থেকে একটি বিদেশী পিস্তলসহ মাহফুজ নামে এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে নরসিংদী থানার ওসি আসাদোজ্জামান। এই সন্ত্রাসী নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডের আসামী। কিছুদিন পূর্বে সে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে যায়।

এর মাস খানেক পূর্বে র‌্যাব’র মেজর আরিফ, নরসিংদী শহরে ভাগদী এলাকা থেকে বিদেশে তৈরী একটি পিস্তল উদ্ধার করে।

জানা গেছে, জয়পুরহাটের অস্ত্র ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিক ও মমিনুর রহমান মমিন এবং নরসিংদী শহরের বকুল তলার বিল্লাল হোসেন জয়পুরহাট থেকে প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো-গ-২৩-৩৭০৩)’র করে ৭টি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন ও ৪২ রাউন্ড গুলি নিয়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গোপন সুত্রে খবর পেয়ে র‌্যাব-১১’র চৌকশ মেজর আরিফ হোসেন এবং এএসপি ওয়ারেস উদ্দিন র‌্যাব সদস্যদেরকে নিয়ে ঘোড়াশাল শহরের চৌরাস্তার মোড়ে উৎপেতে থাকেন। গভীর রাতে উল্লেখিত নাম্বারের প্রাইভেটকারটি ঘটনাস্থলে পৌছলে মেজর আরিফ হোসেন ও এএসপি ওয়ারেস উদ্দিন প্রাইভেটকারের গতিরোধ করেন। পরে তারা প্রাইভেটকারের ভিতরে তল্লাশী চালিয়ে এই বিপুল পরিমান ক্ষুদ্রাস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

এব্যাপারে এএসপি ওয়ারেস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, পিস্তুলগুলোর গায়ে মেড-ইন আমেরিকা লেখা রয়েছে। তবে পিস্তলের গায়ের ফিনিসিং দেখে মনে হয় এগুলো ভারতের তৈরী। এই অস্ত্রগুলো নরসিংদীতে বিক্রির উদ্দেশ্যে আমদানী করা হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে। তবে কে এই অস্ত্রের মূল আমদানীকারক এবং কাদের কাছে এ অস্ত্রগুলো বিক্রির কথা তদন্তের স্বার্থে র‌্যাব সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি।

এলাকার জনগনের ধারনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ অস্ত্রগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমদানী করে থাকতে পারে।

এদিকে নরসিংদী শহরসহ সারা জেলায়ই অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্রের ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গত ৩ জুন মাত্র ২৪ ঘন্টায় ৩২টি ক্ষুদ্রাস্ত্র উদ্ধারের পর পূনরায় একনসংগে ৭টি পিস্তল উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে ব্যপক ভীতির সঞ্চার হয়েছে। জেলার গ্রাম ও মহল্লায় টিনএজারদের হাতে এসব ক্ষুদ্রাস্ত্র ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। নরসিংদী শহরে পেশাদার অপরাধীদের আনাগোনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অপরাধীদের অবাধ বিচরন দেখে জনগন ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। আগে নরসিংদী শহরের অলিগলিতে পুলিশের টহল ছিল। সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে পুলিশে অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করতে হয় বিধায় পুলিশ সাধারণ অপরাধ দমনে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছে না। গত ৩১ মে সন্ধ্যারাতে নরসিংদী শহরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মন্দী কেকেএম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়েছে এক ভয়াবহ হত্যাকান্ড। ৭/৮ জন অস্ত্রধারী ঢাকা থেকে মাসুদ রানা নামে এক যুবককে নরসিংদী এনে তাকে সারাদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্কুলের অভ্যন্তরে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। ২৬ মে সন্ধ্যায় ভেলানগর মহল্লা থেকে ব্রাহ্মন্দী কেকেএম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রকে অপহরন করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এছাড়া নরসিংদী শহর এলাকার ঘোড়াদিয়া মহল্লায় প্রায় প্রতি রাতেই সংঘটিত হচ্ছে অবিরাম ছিনতাই, ডাকাতি ও রাহাজানি। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে এসব রাহাজানি, ডাকাতি ও ছিনতাই সংঘটন করছে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারছে না। এমনইভাবে সারা নরসিংদী শহর চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরন ভূমিতে পরিনত হয়েছে। পুলিশ তাদের গতিবিধির দিকে নজর রাখতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে শহরে মারাত্মক অপরাধ প্রবনতা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে বলে সচেতন লোকজন জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top