সকল মেনু

উচ্চশিক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

universities1441797648নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৯ সেপ্টেম্বর : উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর দিক থেকে চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থী সংখ্যা গত ছয় বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আর গত দেড় দশকে উচ্চশিক্ষাকে এই অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে না উঠলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সীমিত আসনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিই হতে পারত না। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অগ্রযাত্রায় তাদের পথচলা যে খুব সুখকর ছিল তা নয়। কারণ পেছন থেকে কিছু শিক্ষা ব্যবসায়ী এ পথকে আঁকড়ে ধরেছেন। টেনেছেন পিছনের দিকে। এসব প্রতিবন্ধতার পরও সবার জন্য উচ্চশিক্ষা এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমানতালে এগিয়ে গেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়রত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক রিপোর্টে দেখা যায়, ৬০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়রত ৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন ১২ হাজার ১১৩ জন। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৭৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ হাজার ৫৭ জন শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫১২ জনই উচ্চশিক্ষায় বিদেশে রয়েছেন। সংস্থাটি তাদের রিপোর্টে আরও বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হতো এবং শিক্ষক সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে দিগুণ নিয়োগ দিতে হতো। আর সরকার এদিকে নজর দিলে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করতে পারতো না, কিংবা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে এমপিও সুবিধা সৃষ্টি সম্ভব হতো না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, সবার জন্য শিক্ষা স্লোগানে আকৃষ্ট হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশামতোই মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ভিড় করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায়। আর তাদের উদারভাবে স্বাগত জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সবার জন্য শিক্ষা আন্দোলন শুরু হওয়ার পরপরই দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, নতুন নতুন কোর্স চাল করা হয়েছে। সবকিছু মিলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির পথ সুগম হয়েছে। জনসংখ্যার অনুপাতে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা অপর্যাপ্ত। জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ ঘাটতি থাকার কারণে শিক্ষার সম্প্রসারণে স্থবিরতা দেখা দেয়। এই অবস্থায় উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। তারপর উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয় ১৯৯২ সালে। ৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সময়ের প্রয়োজনে এই সংখ্যা এখন ৮৩টি। অনুমোদনে অপেক্ষায় আছে আরও কয়েক ডজন। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন আইন করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান ও গবেষণায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাল্টা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দাবি উঠেছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা এমফিল, পিএইচডি করার অনুমতি প্রদানের। শিক্ষামন্ত্রীও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারের জন্য দেশের প্রত্যেক জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে বেশ কিছু জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয়েছে। অনুমোদনে অপেক্ষা আছে আরও ২ ডজনের মতো।
ইউজিসির হিসাবে মতে, বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার বলা হলেও প্রকৃত এ সংখ্যা আরও বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের সংগঠন (অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অফ বাংলাদেশ) বলছে, বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে। শিক্ষাবিদদের মতে, আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আধুনিক শিক্ষার বিকল্প নেই। আধুনিক অর্থনীতির চাহিদা অনুসারে শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন প্রয়োজন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকিতে যেমন গুরুত্ব দেখা যায়নি। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের গুণগত মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেয় মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু ইউজিসি জনবলের অভাবে সেটি করতে পারছে না। আর উচ্চ শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে বারবার। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে এটি এখন পর্যন্ত হয়নি।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top