সকল মেনু

সাংবাদিকদের নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে – ইকবাল সোবহান চৌধুরী

Chandpur,01 নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর: প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সাবেক সভাপতি ও ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিকদের নীতিবান হতে হবে। অন্য পেশাকে মানুষ মহান পেশা বলে না, বলে সাংবাদিকতা পেশাকেই। এ বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। সাধারণ মানুষ বিপদগ্রস্থ হলে ডিসি অফিসে বা এসপি অফিসে আগে যায় না, আগে আসে প্রেসকাবে। তারা কেনো আগে সাংবাদিকদের কাছে আসে সেটি চিন্তা করতে হবে। আমাদের চিন্তা করতে হবে ওই সাধারণ মানুষগুলোর আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন হয় কি না। তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকরা কোনো আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমরা নীতি-নৈতিকতা মানবো না, তথ্যের বিকৃতি করবো, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার সুযোগে অপসাংবাদিকতা বা হলুদ সাংবাদিকতা করবো তেমনটি কাম্য নয়। তিনি বলেন, অনেকে বলে থাকেন সাংবাদিকরা কার কাছে জবাবদিহি করবে? এ েেত্র আমি বলবো, সাংবাদিকরা প্রথমত বিবেকের কাছে জবাবদিহি করবে, আত্মবিশ্লেষণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি সংবিধান ও দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি করবে। গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য আমরা রাজপথে আন্দোলন করবো, রক্ত দেবো, কিন্তু এই স্বাধীনতার অপব্যবহার যেনো না হয় সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি শুক্রবার চাঁদপুর প্রেসকাব মিলনায়তনে ‘সাংবাদিকতা ও সমসাময়িক পরিস্থিতি’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, অনেকে বলে থাকেন সাংবাদিকরা নিরপে থাকবে। কিন্তু আমি এ বক্তব্যের সাথে একটি পর্যায়ে এসে দ্বিমত পোষণ করবো। আমি যখন দেখবো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তখন আর আমরা নিরপে থাকতে পারি না। তখন আমাদের দেশের স্বার্থ সংরণে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, দেশে যদি আইনের শাসন থাকে, গণতন্ত্র বিকাশ হয়, গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তাহলেই গণমাধ্যম স্বাধীনতা পাবে। তবে স্বাধীনতার নামে আমরা স্বেচ্ছাচারী যেনো না হই। আমার লেখার দ্বারা যেনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে, কারো মান হানি না হয়, দেশের স্বার্থ বিনষ্ট না হয়, সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদের উত্থান না হয় সে দিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আর সাংবাদিকতা হবে জনকল্যাণে। তিনি বলেন, সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্রথম যোগ্যতা আপনি সাংবাদিকতাকে ভালোবাসেন কি-না। এরপর যেগুলো থাকতে হবে সেগুলো হচ্ছে তিনি অবশ্যই শিতি হবেন, ভালো লিখতে যেনো পারেন এবং দেশের সামগ্রিক বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা। তবে তার একাডেমিক শিা যদি নাও থাকে অর্থাৎ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা যদি নাও হন কিন্তু শিতি হন, তাহলে তিনি সাংবাদিক হতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসকাবের সভাপতি চাঁদপুরের মুহম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকদের চাঁদপুরে আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বিগত দিনে চাঁদপুর ও হাইমচরকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রা করতে এসব সাংবাদিকের অবদান এবং ভূমিকার জন্যে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের অতিথি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি ও এটিএন বাংলার এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকতায় মফস্বল বলতে কোনো শব্দ নেই। সাংবাদিকতা সাংবাদিকতাই। লন্ডনে, আমেরিকায়, ঢাকায়ও সাংবাদিকতা করা হয়, আবার চাঁদপুর, কুমিল্লায়ও সাংবাদিকতাই করা হয়। তবে এ েেত্র আমাদের পেশাগত উৎকর্ষতা বাড়াতে হবে। ভালো সাংবাদিক হলে এই প্রেসকাবের গুরুত্ব বাড়বে। আমরা সাংবাদিকতার নামে যারা টাউট-বাটপারী করে তাদের নেতা হতে চাই না।
অনুষ্ঠানে অতিথি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের সত্য কথা বলতে হবে। গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও স্বার্থ রায় কার কি অবদান সে সত্যগুলো বলতে হবে। সত্য কথা বলার েেত্র রাজনীতির গন্ধ খোঁজা ঠিক নয়।
বিশিষ্ট সিডিয়া ব্যক্তিত্ব মঞ্জুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে চাঁদপুর প্রেসকাবকে জাতীয় প্রেসকাবের আওতাভুক্ত করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, নাম যেহেতু জাতীয় প্রেসকাব, তাই এর বিস্তৃতি জাতীয়ভাবে তথা দেশব্যাপী থাকা উচিত। শেকড়, কান্ড, পত্র-পল্লব ছাড়া যেমন একটি পরিপূর্ণ গাছ হয় না, তেমনি চাঁদপুরসহ অন্য জেলাকে বাদ দিয়ে জাতীয় প্রেসকাব হয় না। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি। গঠনতন্ত্র সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি।
ঢাকা থেকে আগত অতিথিদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, জাতীয় প্রেসকাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী, সদস্য মোল্লা জালাল, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক রফিকুর রহমান। চাঁদপুরের সাংবাদিকদের প থেকে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসকাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, কাজী শাহাদাত ও শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, মফস্বলে সাংবাদিকতার জন্য নীতিমালা তৈরি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশিণের প্রয়োজন। চাঁদপুর প্রেসকাবকে জাতীয় প্রেসকাবের আওতাভুক্ত করার ব্যাপারে তাঁরা প্রস্তাব রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসকাবের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী।

চাঁদপুর প্রেসকাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন চাঁদপুর বার্তার বিশেষ প্রতিনিধি মুফতি এসএম জাকির ও গীতা পাঠ করেন চাঁদপুর কণ্ঠের চিফ রির্পোর্টার বিমল চৌধুরী। ওই মতবিনিময় সভায় চাঁদপুর প্রেসকাবের নেতৃবৃন্দসহ চাঁদপুরে কর্মরত সব পর্যায়ের সাংবাদিক এবং বিভিন্ন উপজেলা প্রেসকাবের নেতৃবৃন্দ ও সংবাদকর্মীসহ তিন শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top