সকল মেনু

কার অনুমতি নিয়েছ? – বারী

bari-ECনিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: ক্যামেরাম্যান রিপু নাগরিকদের ছবি নিচ্ছিলেন। এমন সময়ে একজন কর্মকর্তা ছবি নিতে বারণ করে। ‘ওপরে আয়’ বলে আমাদের দু’জনকে টেনে হিঁচড়ে নেয়া হয় প্রকল্পর উপ-প্রকল্প পরিচালকের আব্দুল বারির কক্ষে। তখন ওই কক্ষে ১০-১৫ জন লোক ছিল। বারী বলতে থাকেন, কার অনুমতি নিয়েছ? এদেরকে প্রবীর সিকদারের মতো অবস্থা করবো। পুলিশে দাও, মোবাইল নিয়ে নাও…বলে মারধর শুরু করে।

এভাবেই বর্ণনা করলেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে নির্যাতনের শিকার হওয়া বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার জিএম মোস্তাফিজুল আলম।

বুধবার বেলা ১২টার পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিচতলায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ভোটার তালিকা প্রকল্প কার্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে জনগনের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরতে গেলে তিনি ও তার ক্যামেরাম্যান রিপু এনআইডি প্রকল্পের কর্মকর্তার হাতে লাঞ্ছিত হন।

এসময় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার জি এম মুস্তাফিজুল আলম ও ক্যামেরা পারসন রিপু আহমেদকে মারধর করা হয় এবং ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।

সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনার সময় এনআইডি উইং মহাপরিচালকের কার্যালয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে আক্রান্ত সাংবাদিক মুস্তাফিজুল আলম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, বেলা ১১টার পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিচ তলায় ক্যামেরাম্যান রিপু নাগরিকদের ছবি নিচ্ছিলেন। সঙ্গে কয়েকজন তাদের দুর্ভোগের কথা সাংবাদিকদের জানায়। এমন সময়ে সাখাওয়াত নামের একজন কর্মকর্তা এসেই ছবি নিতে বারণ করে ক্যামেরাম্যানকে। জিজ্ঞেস করে- কার অনুমতি নিয়ে এসব হচ্ছে। সাংবাদিক এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেই তর্ক শুরু করে এবং বলে ‘ওপরে আয়’ বলে ক্যামেরাম্যান রিপুকে সঙ্গে নিয়ে সাত তলায় দৌড় শুরু করে। আমিও পিছু নিই। এরপর কয়েকশ নাগরিকের সামনেই ক্যামেরা নিয়ে টানাটানি শুরু করেন প্রকল্প কর্মকর্তা। পরে আমাদের দু’জনকে টেনে হিঁচড়ে নেয়া হয় প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বারীর কক্ষে। ওই কক্ষে ততক্ষণে ১০-১৫ জন তাদের লোক। বারী সাহেব বলতে থাকেন- কার অনুমতি নিয়েছ? এদেরকে প্রবীর সিকদারের মতো অবস্থা করবো। পুলিশে দাও, মোবাইল নিয়ে নাও…এরমধ্যে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট শাহাবুদ্দিন ও অন্যরা ততক্ষণে মারধর শুরু করে।

মুস্তাফিজু জানান, বারী সাহেবের নির্দেশ পেয়ে কমিউনিকেশন অফিসার আশিক সাংবাদিক দু’জনের মোবাইন ফোন নিয়ে রেখে দেন। সঙ্গে ছিলেন সায়েম নামে আরেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট।

এসময় কার্যালয়ে প্রকল্প পরিচালক মহসীন আলী ও নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক নির্যাতনের খবর পেয়ে নির্বাচন কমিশনার ছুটে এসে সাংবাদিক দু’জনের সঙ্গে কথা বলেন। কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ক্যামেরা ও মোমোরি কার্ড ফেরত দেয়ার জন্যে। শেষ পর্যন্ত ক্যামেরা ফেরত দিলেও মোমেরি কার্ড ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

ঘটনার পর পুলিশ-র‌্যাব এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, ‘একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কী হয়েছে জানি না। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ নিয়ে তেমন উদ্বেগের কিছু নেই।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘সেবা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের লাঞ্ছনাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে এ নির্বাচন কমিশনারের অবস্থানকালে সাংবাদিক লাঞ্ছণার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এ নির্বাচন কমিশনার।

শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘সাংবাদিককে দায়িত্বপালনকালে মারধর করা হবে, এটা কোনোভাবে সহ্য করা হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসি সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দেয় নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ।  দেশের ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটারের মধ্যে ৪৭ লাখের হাতে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। যাদের হাতে পরিচয়পত্র রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিককের পরিচয়পত্রে ইসির গাফলতির কারণে অসংখ্য ভুল রয়ে গেছে। এসব নাগরিক এনআইডি ভবনে এসে তথ্য সংশোধন, হারানো, ঠিকানা পরিবর্তনসহ অন্যান্য সেবা গ্রহণ করে। এ জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার নাগরিক এখানে এসে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। আর সেবার নাম করে ফায়দা লুটছে এ প্রকল্পের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারি ও দালাল চক্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top