সকল মেনু

তিস্তা ব্যারাজের কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ

mail.google.comমো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ১২ আগষ্ট: কেপিআই-১ এর আওতায় থাকা তিস্তা ব্যারাজ ও তার কমান্ড এলাকা এবং নদীর  তীর বাঁধ সংস্কার ও মেরামতের নামে গত অর্থ বছরের প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা হরিলুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরএসকিউ ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ক নামের বিভিন্ন  প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করেই বিভিন্ন ঠিকাদারের নামে ভুয়া বিল ভাউচারে এসব টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। এ নিয়ে সরকারে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে এসব কাজের অনিয়ম দূর্নীতির বিস্তারিত খতিয়ান সংগ্রহ করছে।  অপর দিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী ও প্রকৃত ঠিকাদাররা এ জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন  টিমের মাধ্যমে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার ও অপসারন দাবি করেছে।
সুত্র মতে, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ও তার অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগ রয়েছে। একটি পওর ও অপরটি যান্ত্রিক বিভাগ। পওর বিভাগের কাজ হলো তিস্তা ব্যারাজের উজান ও ভাটির ডান /বাম তীর বাঁধ,স্পার্ক বাঁধ, বিভিন্ন ক্যানেল সহ বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কার করা। আর যান্ত্রিক বিভাগের কাজ হলো তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট সচল রাখা এবং সেচের জন্য জলাধারের পলি অপসারন ও ব্যারাজের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন যানবাহন মেরামত করন।
অভিযোগ মতে  জানা যায়,  ১৫শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা ব্যারাজটি দেশের কেপিআই-১ এর আওতায় সংরক্ষিত এলাকা। গত অর্থবছরের (২০১৪-২০১৫) জুন টু জুন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় তিস্তা নদীর ডানতীর বাঁধ, বামতীর বাঁধ, প্রধান ক্যানেল, স্টাফ কলোনি সংস্কার ও মেরামত, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগের পক্ষে ৬৪টি গ্র“পের কাজ কাগজে-কলমে বস্তÍবায়ন করা হয়েছে। আর এ কাজে বিভিন্ন  ঠিকাদাদের নামে  ওই সব কাজের বিপরিতে উত্তোলন করা হয় ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যা  ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা। সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর সর্বনিন্ম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর বিল করা হয়। আরএসকিউ ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ক নামে এসব কাজ দেখানো হলেও তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও দুজন এসও ৩০ জুনের আগে প্রভাবশালী কয়েকজন ঠিকাদারকে অফিসে ডেকে এনে সমঝোতার মাধ্যমে তাদের লাইসেন্সে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়। এদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী ঠিকাদারের ভাই, চাচাসহ চারজনের ও এক এসওর বিয়াই ও পওর বিভাগের সার্ভেয়ার আতাউর রহমানের স্ত্রী কহিনুর বেগমের লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া করে নিয়ে এসে ব্যবহার করা হয় এসব গ্র“পের কাজে। প্রকৃত মালিক না থাকায় সম্প্রতি ডালিয়া অ্যাকাউন্ট অফিস একটি বিল আটকিয়ে দিলে ভাড়া করা লাইসেন্সের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ফয়সাল আহমেদের নামে এবং তার লাইসেন্সে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি বিল দাখিল করা হয়। কিন্ত চেক দেয়ার সময় প্রকৃত মালিক না পাওয়ায় তা আটকিয়ে দেয় অ্যাকাউন্ট অফিস।
পরে সেটি সংশোধন করে ওই কাজের বিল উত্তোলনে ঠিকাদার পরিবর্তন দেখানো হলেও ওই টাকা শেষ পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারেনি।
স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার জানান, ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে নামে-বেনামে যে বিল উত্তোলন করা হয়েছে তার বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নেই। এছাড়া ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেসব প্রকল্প আবারও দেখিয়ে বিল তোলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডালিয়া পওর বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হক অনিয়মের বিষয় অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, ঠিকাদারদের যেসব কাজের বিল দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
অপর দিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরে এই সব কাজের বিল উত্তোলন করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার সময় এসব কাজ করা হয়নি তাই এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
এদিকে যান্ত্রিক বিভাগে তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট মেরামত, নাটবল্টু টাইট দেয়া ও বিভিন্ন যানবাহনের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং মেরামতের নামে ৪৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অভিযোগ মতে রংপুরের  অবাঙালী ঠিকাদার জাফর আলীর নামে এই টাকা উত্তোলন করা হয়। তিস্তা ব্যারাজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন দুনীর্তিবাজ  কর্মকর্তারা তিস্তা ব্যারাজের কোন সংস্কার না করেই ব্যারাজটিকে পুঁজি করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজটি প্রকৃতভাবে সংস্কার করা হচ্ছেনা। রাতে জ্বলছেনা পর্যাপ্ত সোডিয়াম আলো। জলকপাট উঠানামানোর অটো সিষ্টেম নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। খোয়া গেছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। ম্যানুয়াল সিস্টেমে জলকপাট নিয়ন্ত্রন করা হলেও সেগুলো পর্যন্ত জং ধরে রয়েছে। ফলে ব্যারাজটি দিন দিন জৌলশতা সহ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে ডালিয়া যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুদ্দিন আহমেদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে তিস্তা ব্যারাজ ঘিরে কাজ না করে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা হরিলুটের ঘটনায় সরকারে দুটি গোয়েন্দা সংস্থর পক্ষে এসব কাজের অনিয়ম দূর্নীতির বিস্তারিত খতিয়ান সংগ্রহ করা শুরু করেছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরন করা হবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top