সকল মেনু

বিএনপির কর্মসূচি না থাকলে ফল আরো ভাল হতো: প্রধানমন্ত্রী

1417239475

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১০ আগস্ট :  গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরীক্ষার সময় জ্বালাও-পোড়াওসহ আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে তারা লিপ্ত না থাকলে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল আরো ভাল হতো। তারপরও প্রতিকূল সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া এবং ঠিক সময়ে ফলাফল ঘোষণায় তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। গত রোববার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ১০ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরকালে শেখ হাসিনা আরো বলেন, যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয় তখন দেশে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান ছিলো, বড় ধরনের সমস্যা চলছিল। যা ছিল মানব সৃষ্ট সমস্যা। বিএনপি-জামায়াত ওই দুই পরীক্ষা শুরুর আগে হরতাল দেয়। কিন্তু পরীক্ষা যখন শুরু হলো তখন তারা হরতালের সঙ্গে অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষণা করে। এরপর তারা তথাকথিত আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের মতো নৃশংস অপরাধে জড়িত ছিল। পরীক্ষার সময় এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা খুবই দুঃখজনক। দেশজুড়ে সেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। এটা আমি মনে করি অনেক ভালো। আমি জানি আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক মেধাবী। শেখ হাসিনা বলেন, পরীক্ষার সময় যারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল তারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো, শিক্ষার কণ্ঠরোধ এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এটা তাদেরই চক্রান্ত ছিল যারা ক্ষমতায় থাকার সময় মানুষের উপর অত্যাচার-জুলুম করেছে, দুর্নীতি ও লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাঠিয়েছে। তারা চেয়েছিল মানুষ পুড়িয়ে মেরে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে। প্রধানমন্ত্রী কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এবার প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া ও দেয়া খুবই কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য পরীক্ষার তারিখগুলোও আমাদের বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়েরা এসব বাধা অতিক্রম করে পরীক্ষা দিয়েছে এবং সফল হয়েছে-এটি এক বিরাট সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষক, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। এবার যারা পাস করতে পারেনি, তারা আগামীতে ভাল লেখাপড়া করে সফল হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইংরেজি ও বাংলায় পরীক্ষার্থীরা কম নম্বর পাওয়ায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা নম্বর কম পাচ্ছে। এটাতে দুঃখ পাচ্ছি। আগামীতে জাতির যোগ্য কর্ণধার হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে ছেলে-মেয়েদের আরো ভালভাবে পড়াশুনা করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ছাত্র-ছাত্রীরাই আগামী দিনে এ দেশের কর্ণধার হবে। কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, কেউ মন্ত্রী হবে, কেউ সরকারি কাজে যাবে, তারাই সব করবে। এজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আরো ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেজন্য আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, প্রযুক্তিতে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনই আমাদের মূল লক্ষ্য। শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলা ছাড়া কোন দেশ দারিদ্র্য মুক্ত হতে পারে না। একমাত্র শিক্ষাই আমাদের দিতে পারে সে শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল ও কলেজ নেই আমরা সেগুলোর তালিকা করে সেখানে নতুন করে সরকারি স্কুল-কলেজ নির্মাণ অথবা সেখানকার কোন স্কুল কলেজকে সরকারিকরণ করে দেবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে সরকারি কলেজগুলোকে নিজ নিজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হবে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা শহর ও আশপাশের কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে দিতে হবে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি নজরদারিতে রাখতে পারবে। শিক্ষার মানটা উন্নত হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি কলেজগুলোও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চেয়েছেন, আমরা তাদের বলছি, যেসব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সেসব এলাকায় যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়, বিশেষ করে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। সকালে গণভবনে প্রথমবারের মতো এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের অনুলিপি ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফলের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন ১০ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান। পরে প্রধানমন্ত্রী ল্যাপটপে ক্লিক করে সেই ফলাফল অবমুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পিরোজপুর, পাবনা জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং ১০ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top