সকল মেনু

শেষ নেই যে ভোগান্তির

1438632115

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৪ আগস্ট : রাজধানী ঢাকায় যানজটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণপরিবহনে ভোগান্তি। প্রতিদিন সকাল-বিকাল অফিস সময়ে যানবাহনে উঠতে-নামতে সবাইকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। পুরুষরা কোনোভাবে পার পেলেও সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন নারী-শিশু-বৃদ্ধ-প্রতিবন্ধী যাত্রীরা। পড়ালেখা, চাকরি, শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা-নেয়াসহ বিভিন্ন নারী প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। কর্মস্থল, বিদ্যালয়, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করছেন গণপরিবহন। আর প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি বাসে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকেও যেন নেই। নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়টি সিট বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিন থেকে চার সিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ওই আসন অনেক সময়ই পুরুষ যাত্রীদের দখলে থাকে। সংরক্ষিত আসন উদ্ধার করতে গিয়ে পুরুষ যাত্রীদের বিরূপ আচরণে নারীদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এমনকি সংরক্ষিত নয়টি আসন ছাড়া অন্য আসনে বসলেও পুরুষ যাত্রীরা শুরু করেন তর্কবিতর্ক। যানবাহনে ওঠার ক্ষেত্রে নারী শিশুকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা খুব বেশি একটা নজরে পড়ে না। ২০১৪ সালে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক জরিপ মতে, নারীরা গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন। ৪৮ শতাংশ নারীর বাসের চালক বা ভাড়া আদায়কারীর মুখে অবমাননাকর ভাষা শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। যৌন হয়রানি বা সহিংসতা এড়াতে কৌশল হিসেবে জরিপে অংশ নেয়া নারীর ১৩ শতাংশ গণপরিবহন ব্যবহার করা বন্ধ করেছেন। তিন শতাংশ নারী আত্মরক্ষায় ছোট যন্ত্রপাতি সঙ্গে রাখেন। জানা যায়, ২০০৮ সালে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার। নানা সমস্যার কারণে ২০১৫ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারে। এদিক থেকে গণপরিবহনে নারীর জন্য বরাদ্দকৃত আসনের সংখ্যা কমে এসেছে। তাছাড়া এসব পরিবহনে আপাতত নারী আসন বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনাও নেই বলে জানা গেছে। অনেক সময় বাসে সিট নেই বলে নারীকে উঠতে দেয়া হয় না। যানবাহন স্বল্পতার কারণে দাঁড়িয়েও যাতায়াত করতে হচ্ছে নারীকে। সরকারিভাবে পরিচালিত বিআরটিসি নারী বাস সার্ভিসের সেবাও পর্যাপ্ত নয়। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এই বাস সার্ভিসের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারী যাত্রীরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) ১৯৯০ সালে প্রথম রাজধানীর দুইটি রুটে নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করে। তবে বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক হওয়ায় চালু হওয়ার মাত্র ৮ মাস পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০১ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে সেটা ফের চালু হয়। বিআরটিসির তথ্যমতে, রাজধানীতে বিভিন্ন সড়কপথে মোট ১৬টি বাস নারীর জন্য পরিচালিত হচ্ছে। নারী যাত্রীরা বলছেন, রাজধানীতে কর্মজীবী নারীর তুলনায় এই বাসের সংখ্যা খুবই কম। সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্রমাগত লোকসান হওয়ার কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাসের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এদিকে নিয়ম ভেঙে বিআরটিসির এসব বাসে পুরুষ যাত্রী বহন করতেও দেখা যায়। জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির ৮টি নারী বাস চলছে। তবে অনুমোদন থাকলেও কল্যাণপুর রুটে এই সেবা চালু করা যায়নি। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ-কাঁচপুরের সার্ভিস চালুর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, এসব বাস পথে অকারণে সময় নষ্ট করে। রোকসানা আলম নামের এক যাত্রী বলেন, সময় মেনে বিআরটিসির বাসগুলো ছাড়ে না। এজন্য এতে সব সময় চলাচল করা যায় না। এছাড়া অনেক নারী এ বাস সার্ভিস সম্পর্কে জানেন না। শ্যামলী থেকে প্রতিদিন ধানমন্ডিতে যাতায়াত করতে হয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিশাত মজুমদারকে। তিনি বলেন, ভিড়ের মধ্যে বাসে উঠতে গেলে বিভিন্ন কটূক্তিসহ অশোভন আচরণ সহ্য করতে হয়। বাসের হেলপার থেকে শুরু করে সহযাত্রী অনেক শিক্ষিত লোকও খারাপ আচরণ করেন। মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম এ প্রসঙ্গে জানান, নারীর যাতায়াত সমস্যা দূর করতে বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। নারীকেও নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে। পুরুষ যদি নিজের বোন কিংবা মেয়ে মনে করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন তাহলে নারীর যাতায়াতে সমস্যা কমবে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top