সকল মেনু

রাষ্ট্রপতির অবসর সুবিধা পাবেন না জিয়া, এরশাদ

DSC_984917

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৪ আগস্ট : অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দখলকারীরা অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন না। এমন বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন, ২০১৫’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই খসড়া আইনে পরিণত হলে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে সাবেক সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান ও লে. জেনারেল এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতি পদের জন্য কোন অবসরকালীন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এ তালিকায় আরো আছেন খোন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আবু সা’দত মো. সায়েম। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে তিনিও এ ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। তবে স্বাধীনতার পর থেকে যেসব বৈধ রাষ্ট্রপতি এ সুবিধা নেননি তারা বা তাদের উত্তরাধিকারীরা এ সুবিধা পাবেন। ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন, ২০১৫’ এর খসড়ায় বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের পর রাষ্ট্রের অন্যকোন তহবিল থেকে বেতনভাতা দেয়া হয় এমন কোন পদে কেউ দায়িত্ব পালন করলে তিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য অবসর ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন না। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি রিট মামলার রায়ে সর্বোচ্চ আদালত খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা’দত মোহাম্মদ সায়েম, জেনারেল জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে অবৈধ, অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেয়। আদালতের ওই রায়ের আলোকে ১৯৭৯ সালে জারি করা এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ (যা কিনা ১৯৮৮ সালে সংশোধন করা হয়) রহিত করে ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন, ২০১৫’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ দুই সেনা কর্মকর্তার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতিদের অবসর সুবিধা আইন প্রণয়নের আগে স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ওই বছরের ১৫ আগস্ট খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘রাষ্ট্রপতিদের অবসর সুবিধার জন্য ১৯৭৯ সালে ‘প্রেসিডেন্ট পেনশন অর্ডিন্যান্স’ করা হয়। পরে ১৯৮৮ সালে এটি সংশোধন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অসাংবিধানিক পন্থায়, অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন মর্মে ঘোষিত কোন ব্যক্তি অবসর ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী হবেন না। খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, কোন সাবেক রাষ্ট্রপতি জীবদ্দশায় অথবা তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার মনোনীত কোন ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারী ইতোপূর্বে আনুতোষিক গ্রহণ না করলে এখন তা গ্রহণ করতে পারবেন। নৈতিক স্খলন বা অন্য কোন ফৌজদারি অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হলে কোন রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি পাবেন না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের অবসর সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনে কারো নাম লেখা থাকে না। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে এ দু’জন পেনশন ও গ্র্যাচুইটি গ্রহণ করছেন না। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তারা যে প্রতিষ্ঠানে (সেনাবাহিনী) কর্মরত ছিলেন সেখান থেকে তারা পেনশন পাচ্ছেন। সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পেনশন পান।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার পেনশন পাবেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নতুন আইন অনুযায়ী কোন সাবেক রাষ্ট্রপতি পেনশন না নিলে তিনি তার প্রাপ্য হবেন। বঙ্গবন্ধু পেনশন গ্রহণ করেননি। তাই তার উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন।’ রাষ্ট্রপতির পেনশন ধরা হয় মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৯ সালের মূল অধ্যাদেশে এ বিষয়ে সর্বনিম্ন পেনশন ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা, বেতন ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন রাষ্ট্রপতির বেতন হবে ৬১ হাজার ২০০ টাকা আর এর ৭৫ শতাংশ হিসাবে অবসর ভাতা হবে ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। গ্র্যাচুইটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত অংকের সঙ্গে রাষ্ট্রপতিরা যতদিন দায়িত্ব পালন করেন তার সঙ্গে ৮ দিয়ে গুণ দেয়া হয়। কেউ যদি আট বছরের বেশি দায়িত্ব পালন  করেন তার ক্ষেত্রেও আট দিয়ে গুণ দেয়া হয়। নতুন আইনে আট বছরের এ সীমা তুলে দেয়া হয়েছে।’
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top