সকল মেনু

সাতক্ষীরায় চিংড়ি চাষে কমছে অন্য মাছের চাষ

Fish20140903143421

অর্থ ও বানিজ্য ডেস্ক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৯ জুলাই : আগে সাতক্ষীরা জেলা ছিল ভাত ও মাছের অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। বিল এবং নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। তখনকার মতো এখন আর বাজারে মাছ পাওয়া যায় না। সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে গেলে এখন মাছের দাম শুনলে চমকে উঠতে হয়। লোনা পানির চিংড়ি চাষ শুরুর পর থেকে ক্রমান্বয়ে এই জেলায় অন্যান্য মাছ কমতে থাকে। লোনা পানির চিংড়ি গ্রাস করেছে প্রায় সব কিছু। অবশ্য চিংড়ি চাষে সাফল্যের গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের হিসাব। জেলার সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলাবদ্ধতা ও লোনা পানির চিংড়ি চাষ সমপ্রসারিত হওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে লোকজন আজকাল অধিক আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের মন থেকে দয়ামায়া ক্রমান্বয়ে উঠে যাচ্ছে। আত্মীয়-কুটুমবাড়ি বেড়াতে তারা আর পূর্বের মতো উৎসাহ বোধ করছেন না। কপোতাক্ষ, বেতনা, খোলপেটুয়া, মরিচ্চাপ, কাকশিয়ালী, গলঘেসিয়া ও ইছামতির উচ্ছল তরঙ্গমালার সেই যৌবন হারিয়ে গেছে। ফলে নাইওরে বেড়ানোও বর্তমানে বহুলাংশে কমে গেছে। অতীতে জেলায় বিভিন্ন পালাপর্বণে নানা প্রকার আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা ছিল। যেমন ঘোড়দৌড়, নৌকাবাইচ, কুস্তি ইত্যাদি। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ঘোড়দৌড়, ভাদ্র-আশ্বিন মাসের ভরা নদীতে নৌকাবাইচ, আশ্বিন-কার্তিক মাসে কুস্তি লড়াই ইতাদি বহুল প্রচলিত ছিল। আজ এ জেলার গ্রামীণ আনন্দ উৎসবগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রেস ক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ জানান, সাতক্ষীরার আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ রাজনৈতিক অবস্থা বর্তমানে খুবই ভালো। তবে বর্তমানে জলাবদ্ধতার কারণে চিংড়ি ঘের এলাকার মানুষেরা কিছুটা দুরাবস্থার মধ্যে আছে। এসব এলাকার লোকেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল অদুদ জানান, জেলায় ৬৬ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে ৪৯ হাজার ১৬৩ টি ঘেরে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এই জেলায় মোট পোনার চাহিদা রয়েছে ৩৩৩ কোটি। সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি ঘেরে বাগদার রেণু পোনা সরবরাহের জন্য কক্সবাজার ভিত্তিক ছোট বড় প্রায় ৫৫টি হ্যাচারি গড়ে উঠেছে। ২০১০ সালের মৎস্য হ্যাচারি আইন অনুযায়ী এসব হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের আগে প্রতিটি মা বাগদার ‘পিসিআর টেস্ট’ করা আবশ্যক। কিন্তু মাত্র দুই একটি হ্যাচারি ছাড়া আর কোন হ্যাচারি সরকারের এই আইন মানছে না। তারা ‘পিসিআর টেস্ট’ ছাড়াই তাদের হ্যাচারিতে উৎপাদিত বাগদা রেণু পোনা বাজারজাত করছে। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গ্রামে সালিশ-বিচারের নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছে হরহামেশাই। সুবিচারতো দূরের কথা, সত্য কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। কয়েকজন বাস শ্রমিক জানিয়েছেন, এখানকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করছেন কিছু নেতা। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের আদর্শ থাকলেও বর্তমানে উঠতি নেতারা টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না। অপরাজনীতির কারণে নষ্ট হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কও। অতীতে জেলার জনসাধারণের মধ্যে রাজনীতির  চেয়ে ব্যক্তিগত সর্ম্পকেরই অধিক মূল্য ছিল। জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে সাতক্ষীরার আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনেক ভালো। তবে কিছু সম্প্রদায় পিছিয়ে আছে। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে এ জেলার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সাতক্ষীরায় বর্তমানে গড়ে উঠেছে মেডিক্যাল কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ অনেক উচ্চমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বাড়ছে জেলার শিক্ষার হার। সার্বিক দিক বিবেচনায় সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে বর্তমানে অধিক সমৃদ্ধ। এই জেলার উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশ। এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দর ও সুন্দরবন  এই জেলার অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। প্রতিবছর ভোমরা বন্দর থেকে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্দরবনের মধু, কাঁকড়া, জেলার বিখ্যাত হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম, কলারোয়ার টালি এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে জেলার বহু বেকার যুবকের। চিংড়ি চাষের সমপ্রসারণ ঘটায় এই পেশার সাথে সংশ্লি­ষ্ট হয়ে জেলার বহু মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে বাউকুলের। শুধুমাত্র বাউকুল চাষ করে জেলার অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। এসব কারণে জেলার সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চলছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top