সকল মেনু

`ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ভোটের মাধ্যমেই `

timthumb.phpনিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম :  প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্ব কারো কথায় হবে না। ছাত্রলীগের কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারো কথায় নয়, ছাত্রলীগের কাউন্সিলররা যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, তারাই ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেবে। এক সময় স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে নির্বাচন ছাত্রলীগই শুরু করেছিল। এবারও সেই ব্যালট বাক্সে নির্বাচন হবে। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগে যাতে মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্ররা নির্বাচিত হয়ে যথাযথ নেতৃত্ব দিতে পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের বয়সের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্মেলন করতে দুই বছর দেরি হয়েছে। তবে আমি তাদের দোষ দেই না। কেননা গত দুই বছর একজন নেত্রীর অবরুদ্ধ নাটক ও জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। এত দিন ছাত্রলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ বয়স ২৭ বছর নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম, সকল বিষয় বিবেচনা করে তা থেকে বাড়িয়ে ২৯ বছর করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের আদর্শ শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। সবার আগে লেখাপড়া। নেতৃত্ব্‌ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যারা মেধাবী তাদেরকে নির্বাচিত করতে হবে। ছাত্রলীগ দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, যারা বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে জড়িত। তাই এই সংগঠনের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সে জন্য নেতা-কর্মীদের সচেতন থাকতে হবে।’

শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি অগ্রগতি লাভ করতে পারে না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন সংগঠন ছাত্রলীগ। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবসময় আদর্শের পথে থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের নেতাদের সমন্বয়ে নিউক্লিয়াস ফর্ম গঠন করা হয়েছিল। সে সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। স্বাধীনতাপূর্ব সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু এই ছাত্রলীগের মাধ্যমেই সকল অন্দোলনকে সফল করেছেন। আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার করে আসছে। ত্যাগের মনোভাব আছে বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ সালে জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার পর ছাত্রলীগ তার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও অগ্রণী ভূমিকা রাখে। যার ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। কিন্তু আইয়ুব খানের মতো জিয়াও স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা যখন সরকার গঠন করেছি তখনই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছি। অথচ বিএনপি-জামায়াত ২১ বছর দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫-এ যদি জাতির পিতাকে হত্যা করা না হতো, তাহলে আজ আমরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত দেশে পরিণত হতাম। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের, দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির।’

ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে, প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। গড়ে তুলেছি। এখন কম্পিউটার ল্যাপটপ মানুষের হাতে হাতে। ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে যুগের সঙ্গে তাল মিলেয়ে পাবলিক বিশ্যবিদ্যালয় থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। গবেষণার দিকে প্রাধান্য দিয়েছি বলেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে একটা আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। সেই শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিয়ে আগামী দিনের নেতৃত্বেকে গ্রহণ করতে হবে। আজ ছাত্রলীগের যারা নেতৃত্বে তারাইতো আগামী দিনে দেশের নেতৃত্বে আসবে।’

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ অভিশপ্ত ছিল। কারণ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাসহ জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেও তাকে হারাবার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই বিচার যেন না হয়, সেজন্য আইন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াসহ অন্যান্য সরকার খুনিদের পুর্নবাসন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্য্কর করা হয়েছে, বাকিটুকুও সমাপ্ত করা হবে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলে আমরা কাজ করছি। আমাদের একমাত্র শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। আমরা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।’

অর্থনৈতিক মুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ মানুষের আয়ুষ্কাল ৭০ বছরের বেশি, প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপরে। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে বলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজ স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্থবায়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে স্থলসীমানা নির্দিষ্ট হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমু্দ্র সীমানা সমস্যা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে এখন আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। কিন্তু আমরা নিন্ম থাকতে চাই না উচ্চমধ্যম পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে চাই।’

সংগঠনের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, যোগাযোগ, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top