সকল মেনু

পোড়া বাড়িঘর বাড্ডায় ছিল মরণ ফাঁদ

Baddaমেহেদি হাসান নিয়াজ : আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু যদি এটি আগুনে পুড়ে না যেত, তবে অন্যরকম একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। যেমনটি ঘটেছিল রামপুরায় পুরনো ঝিলপাড়ে। প্রাণহানি ঘটেছিল পাঁচজনের। রামপুরার ওই ঝিলের ওপর যেভাবে বাঁশ, কাঠ, ইট-বালু ও টিন দিয়ে বাসা তৈরি করা হয়েছিল, ঠিক সেরকমই বাড্ডাতেও ঝিলের ওপর বাঁশ, কাঠ, ইট-বালু ও টিন দিয়ে তৈরি করা হয় দুই তলা ও তিন তলা বসতবাড়ি।

সেখান বেঁচে যাওয়া বাসিন্দাদের দাবি, এসব বসতবাড়ির বেশির ভাগই পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ধ্বংসাবশেষ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারে, যে কোনো সময় পুরো বসতবাড়িগুলো দেবে যেতে পারত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যবাড্ডা ব্যাংক এশিয়ার পেছনে পুরনো একটি ঝিলের ওপর বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে শতাধিক ঘর তৈরি করা হয়েছিল। আবার একদিকে সিমেন্টের খুটি ও ইট ব্যবহার করা হযেছে। যার অংশ বিশেষ এ্খনো পড়ে রয়েছে। এখনো দাঁড়িয়ে আছে কিছু পোড়া খুটি এবং পড়ে আছে টিনের স্তুপগুলো। পুড়ে যাওয়া কয়লার অংশ বিশেষ কিছু ঝিলের পানির ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে।

গত ১৫ এপ্রিল হঠাৎ করে দেবে যায় রামপুরায় পুরনো ঝিলের ওপর নির্মিত  দোতলা টিনশেড বাড়িটি। সেদিন মৃত্যুর মিছিলে শামিল হয়েছিল ১২টি তাজা প্রাণ। আরো ডজন খানেক নারী-পুরুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। ওই ঘটনায় অবৈধভাবে ঝিলের ওপর ঘর তোলার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওই ঘটনার পর স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসন থেকে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ঢাকা মহানগরে এ রকম আরো কত মরণ ফাঁদ আছে তা দেখবার অপেক্ষায় রয়েছে জনগণ।

বাড্ডায় ঝিলের ওপর একইভাবে নির্মিত টিনশেড দুই ও তিন তলা বাড়িগুলো পানির নিচে দেবে না গেলেও পুড়ে ছাই হয়েছে। বেঁচে গেছে শতাধিক তাজা প্রাণ। কিন্তু এ রকম যদি না হতো, তবে প্রাণের আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যেত। এখনো যে দশ ভাগ বসতবাড়ি পুড়ে যায়নি, তারাও দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন-রাত্রি পার করছেন। এরই মধ্যে সেসব বসতঘর একদিকে হেলে গেছে। তারাও ভাবছেন, বউ-বাচ্চা নিয়ে সেখানে থাকবেন নাকি অন্য কোথাও চলে যাবেন।

স্থানীয়দের দাবি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ওসমান গণি পুরনো এই ঝিলের ওপর অবৈধভাবে সম্পূর্ণ অবকাঠামো তৈরি না করেই বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। সেখানে কয়েকশ ঘর তৈরি করে নিম্ন আয়ের লোকদের ভাড়া দিয়ে টাকা তুলে আসছিলেন। কাঠমিস্ত্রি, ফুচকা বিক্রেতা, রাজমিস্ত্রি, রিকশাওয়ালাসহ বিভিন্ন স্তরের নিম্ন আয়ের লোকজন সেখানে বাস করত। তাদেরও সব কিছু পুড়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুড়ে যাওয়া স্থানের পাশের এক বাসিন্দা জানান, কমিশনার ওসমান গণি অবৈধভাবে এই বস্তি তৈরি করেছে। মিছিল-মিটিং করতে এখানকার লোকদের টাকা দিয়ে নিয়ে যেত। মারামারি করতেও ওই সকল লোকদের ব্যবহার করা হতো।

এখানে কোনো অবৈধ মাদক ব্যবসা হতো কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এখানে কোনো মাদক ব্যবসা হয় না। তবে ওসমান গণির শক্তি হিসেবে ওই সকল লোকদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো।’

সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আলিম জানান, এখানে প্রায় তিন থেকে চারশর মতো পরিবারের ঘর পুড়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগই ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছে। ঘর পোড়ার সঙ্গে আসবাবপত্র যা ছিল, তাও পুড়ে গেছে। এখন শূন্য হাতে কে কোথায় থাকবে কেউ বলতে পারছে না।

এই ঝিলপাড়ের ওপর তৈরি ঘরে কেন বাস করছেন, জানতে চাইলে আলিম বলেন, ‘আয় কম করি, তাই কম ভাড়া দিয়ে এখানেই থাকি। অন্যখানে থাকলে তো ভাড়া অনেক বেশি দিতে হয়। ভাড়া বেশি দিলে বউ-বাচ্চা নিয়ে খামু কি!’

এ প্রসঙ্গে পুড়ে যাওয়া ওই বসতবাড়ির মালিক কমিশনার ওসমান গণি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, গতকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

তাদের থাকার বন্দোবস্ত করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top