মেহেদি হাসান নিয়াজ,হটনিউজ২৪বিডি.কম : ‘বাঘ দেখবো, হাতি দেখবো, সিংহ মামা দেখবো, আর বানরতো দেখবই’ ছোট্ট শিশু বিন্তির এরকম একের পর এক আবদার যেন শেষই হচ্ছে না।
এরকম হাজারো শিশুর নানা আবদার আর আনন্দে মুখরিত ছিল রাজধানী ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। এ আনন্দ কোমলমতি শিশু-কিশোরদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় সবচেয়ে বেশি। তাই প্রতিবারের মতো এবারও দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে শিশুদের কোলাহলে।
ঈদের ছুটির কারণে চিরচেনা রাজধানীর এখন ভিন্ন রূপ। গোটা রাজধানী বলতে গেলে ফাঁকা। তবে ব্যতিক্রম চিত্র শাহবাগের শিশুপার্ক, মিরপুরের চিড়িয়াখানা, শ্যামলীর শিশু মেলা। সেসব স্থানে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের কলরবে যেন মেতে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
যানজট ও কোলাহলমুক্ত নগরীতে একটু ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করছেন না নগরবাসী। শাহবাগ শিশুপার্কে দেখা যায় শিশুদের বিনোদন যেন ছুঁয়েছে বড়দেরও। ভিড় ঠেলে টিকিট কাটছেন সবাই। আর শিশুদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠছে নানা বয়সের মানুষ। শুধু শিশুপার্কেই নয়। আশপাশের রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও ছিল লোকে লোকারণ্য।
শিশুপার্ক : ভিড়ের কারণে রেলগাড়ি, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, উড়ন্ত বিমানসহ অনেক রাইডেই চড়তে পারছে না কমলমতি শিশুরা। তবে এতেও যেন তাদের আনন্দে ভাটা পড়েনি। শিশুপার্কে আসতে পেরেছে এতেই বাচ্চারা খুশি বলে জানালেন বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে আসা অনেকেই।
তেজগাঁও এলাকা থেকে আসা কাউসার আহমেদ বুলবুল বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে শিশুপার্কে এসেছি। যানজটের এই শহরে ঈদ উৎসব ছাড়া অন্যদিনগুলোতে বিনোদনের সুযোগ খুব একটা মেলে না। তাই পুরো পরিবার নিয়ে এসেছি। ফাঁকা রাস্তায় অল্প সময়ে মধ্যেই এখানে এসেছি, তবে প্রায় দুই ঘন্টা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে পার্কের ভিতর প্রবেশ করতে হয়েছে।
মগবাজার থেকে আসা বিলকিস বেগম বলেন, দুই শিশু পুত্র রিয়ান ও রায়হানকে নিয়ে সকালের দিকে তিনি শিশুপার্কে এসেছেন। সকালে ভিড় কম থাকায় শিশু-পার্কের রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, ফুলদানি আমেজ, ঝুলন্ত চেয়ার, লম্ফঝম্ফ, ব্যাটারি কার, রেলগাড়ি ও বিস্ময়চক্র এই ১১টি রাইডারেই দুই সন্তানকে চড়িয়েছেন। এতে বাচ্চারা খুব খুশি।
চিড়িয়াখানা : শেওড়াপাড়া থেকে চিড়িয়াখানায় আসা ছয় বছরে বিন্তি তার মাকে আদো আদো করে বলছে, ‘আমি এখানে বাঘ দেখবো, হাতি দেখবো, সিংহ মামা দেখবো, আর বানরতো দেখবই’। পাশে দাঁড়ানো তার মা নাসরিন আক্তার টিনা হাসি মুখে মেয়েকে আশ্বস্ত করলেন ‘আমরা যখন চিড়িয়াখানায় এসেছি তখন সব মামাই দেখবো মা মনি’।
বিন্তির বাবা মো. ওয়ালিউল্লাহ হাসিব হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, সারা বছর স্কুল আর নানা ব্যস্ততার কারণে সাধারনত পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে বেরোতেই পারি না। তাই এখানে এসে একেবারে বাঁধনছাড়া হয়ে গেছে আদরের বিন্তি।
বিন্তির মতোই অবস্থা এখানে আসা প্রায় সব শিশুরই। শুধু শিশুরাই নয়, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণ। এখানে নানা রকম বন্য পশুপাখির বিচিত্র সব কাণ্ড-কারখানা দেখে মজার সময় অতিবাহিত করেন তারা।
শিশুমেলা: নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শিশু-কিশোরদের আনন্দ আর উল্লাসে পুরো শিশুমেলার পরিবেশের তুলনা চলে শুধু রূপকথার জাদুর রাজ্যের। হৈ-হুল্লোড়, আনন্দঘন পরিবেশে দোলনা, ব্যাটারি কারসহ বিভিন্ন রাইডে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের মধ্যে ছিলো না কোন কষ্ট। সবকিছুতেই ছিলো ঈদের আমেজ।
পাল্টে গেছে ঢাকার চিত্র: যানজট কবলিত ঢাকা আজ ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। পাল্টে গেছে নগরীর চেহারা। ঈদে ঢাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। যারা এই সময়ে ঢাকাতেই ঈদ উদযাপন করছেন তারা ফাঁকা এই পরিবেশ বেশ উপভোগ করছেন। ঢাকার রাজপথগুলোতে নেই দুর্বিষহ যানজট। নেই কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা। ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে ঈদের ছুটির সঙ্গে এই শান্ত ঢাকা শহর যেন এক বাড়তি পাওনা। নগরবাসীকে দিয়েছে স্বস্তির অনুভূতি। ঢাকার ফাঁকা নির্জন রাস্তাগুলোতে ঘুরে বেড়ানোটাও বিনোদনে রূপ নিয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।