সকল মেনু

আজ সাংবাদিক কেবলের ১৫তম হত্যাবার্ষিকী

mail.google.com  যশোর থেকে আব্দুল ওয়াহাব মুকুল:  ১৬ জুলাই দৈনিক জনকন্ঠ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, নির্ভিক সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলের ১৫তম হত্যাবার্ষিকী। দীর্ঘসময় পার হলেও বিচার সম্পন্ন হয়নি চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির। দ্রুত বিচারের জন্য মামলাটি খুলনাতে স্থানান্তর করা হলেও বর্তমানে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে সরকার পক্ষের কৌঁসূলী বলেছেন মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যশোর আদালতে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচী নিয়েছে যশোরের সাংবাদিক সমাজ। এর মধ্যে রয়েছে কালোব্যাচ ধারণ, শোক র‌্যালী, আলোচনা সভা ও মরহুমের কবর জিয়ারত।
২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে যশোরের ২৫০শয্যা হাসপাাতাল মোড়ে দৈনিক জনকণ্ঠ-এর যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় খুন হন সাংবাদিক শামছুর রহমান। সন্ত্রাসীরা অফিসে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকি অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। তবে তিনি অভিযোগে হত্যার ৪/৫টি কারণ ও সম্ভাব্য জড়িতদের নাম উল্লেখ করেন। ২০০১ সালের মে মাসে
শামছুর রহমান হত্যা মামলায় ১৬জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল সিআইডি। তবে বিএনপি জোট সরকারের আমলে মামলার বর্ধিত তদন্তে সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করায় আসামির সংখ্যা হয় ১৭জন। পরবর্তীতে মামলার অন্যতম আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে এবং কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু মৃত্যুবরণ করেন। যে কারণে বর্তমানে এ মামলার আসামি ১৫জন।
২০০৫ সালের জুন মাসে এ মামলার সকল আসামীর বিরুদ্ধে যশোরের ষ্পেশাল জজ আদালতে চার্জ গঠন হয়। এরপর ২০০৫ সালের জুলাই মাসে বাদীকে না জানিয়ে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সাক্ষীদের হুমকি ধামকি দেয়ায় খুলনায় মামলা চালাতে রাজি ছিলেন না নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা আক্তার লাকি। যে কারণে মামলাটি যশোরে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করেন তিনি। কিন্তু ২০০৫ সালে এক আসামির রিট পিটিশনের কারণে মামলাটি আজও স্থগিত।
দীর্ঘ ১৫ বছরেও বিাচর না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন নিহতের ছোট ভাই ও দৈনিক জনকণ্ঠের বর্তমান যশোর অফিস প্রধান সাজেদ রহমান বকুল। তিনি বলেন, ন্যায় বিচারের জন্য অনেকের কাছে গেছি কিন্তু বিচার পাইনি। বরং ৮ বছর ধরে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এখন আমরা লজ্জিত তাই বিচারের জন্য কারো কাছে যাই না।
নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকি বলেন, শামছুর রহমান নির্দোষ ছিলেন। তাই আমি ও আমার সন্তানরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হত্যার বিচার চেয়ে যাবো। তিনি বলেন, আমরা বিচার পেলে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হতো। তাহলে আর কোনো সাংবাদিককে হত্যার শিকার হতে হতো না। তিনি মনে করেন, একটি বিচার হলে অন্তত অপরাধীরা দ্বিগুন উৎসাহে এ ধরণের হত্যাকান্ড ঘটাতে সাহস পেত না।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব মুকুল ও সাধারন সম্পাদক সাকিরুল কবীর রিটন এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি নূর ইসলাম । তারা বলেন, প্রতিবছরই আমারা শামছুর রহমান হত্যার বিচার দাবি করছি। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। এতে করে বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের বিশ্বাস ঠিকিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়ছে। সাংবাদিক হত্যার যে বিচার হয় সে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে শামছুর রহমান হত্যার পুনঃতদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল কাদের আজাদ জানান, মামলাটি যশোরে থাকা অবস্থায় ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপর মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হলে বাদী নিরাপত্তার কথা জানিয়ে মামলাটি যশোরে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠে। এরপর আসামি পক্ষের রীটের কারণে মামলাটি বন্ধ রয়েছে। তবে বিচার সম্পন্ন করতে মামলাটির যশোরে ফিরিয়ে আনতে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর এবং পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মরহুদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন, কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও শোক র‌্যালী ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top