সকল মেনু

রাজনকে হত্যা করে ভিডিও অনলাইনে, দেশ জুড়ে ক্ষোভ-ধিক্কার

1436811593

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৪ জুলাই : সিলেটের শহরতলী কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পৈশাচিক কায়দায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও ধিক্কারে ফেটে পড়েছে সারা দেশের মানুষ। শুধু দেশে নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া সেই নৃশংস পাশবিকতার ভিডিও দেখে একই রকম ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা। ফেসবুকে অব্যাহত রয়েছে নিন্দার ঝড়। এদিকে রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি মুহিত আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত ও সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া মুহিতের ছোট ভাই কামরুল ইসলামকে গত সোমবার জেদ্দা থেকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। আরেক আসামি ইসমাঈল হোসেনকেও (৩২) গতকাল ভোরে সিলেটের লামাকাজী মীরেরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইসমাইল সম্পর্কে মুহিতের তালতো ভাই (বেয়াই)। এ নিয়ে এই হত্যা মামলায় ৪ আসামির ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। গত ৮ জুলাই ভ্যান চোর সন্দেহে মাত্র তের বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে প্রধান আসামি মুহিত ও তার সঙ্গীরা। নির্যাতনকারীরাই শিশুটিকে পেটানোর ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। এর আগে কুমারগাঁও এলাকায় গাড়ীর গ্যারেজে রাজনকে নির্যাতন করে হত্যার পর একটি মাইক্রোবাসে তুলে তার লাশ রাতের আঁঁধারে গুম করতে চায়। এ সময় গ্রামবাসীর কাছে ধরা পড়লে তারা মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রা-চ-৫৪-০৫১৬) রেখে পালিয়ে যায়। তবে মুহিতকে (২২) ধরে পুলিশে দেয় জনতা। পরে জালালাবাদ থানা পুলিশ হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে রাজনের বাবা আরেকটি অভিযোগ দায়ের করে যা কিনা ওই মামলায় যুক্ত করলে মুহিত, তার ভাই কামরুল ইসলাম, তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), ইসমাইলসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মুহিতের ৫ দিনের রিমান্ড
চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন গত রোববার আসামি মুহিতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে সিলেট মহানগর হাকিম আদালত-২ এর বিচারক ফারহানা ইয়াসমিন গতকাল ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উত্তাল কান্দিগাঁও
রাজন হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে তারা প্রশাসনকে ১২ ঘন্টার সময় বেঁধে দেয় রোববার রাতে। তা না হলে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এলাকাবাসী। রোববার তারাবির নামাজের পর রাজনের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদে আলী গ্রামে ২০ গ্রামের মানুষ বৈঠক করেন। খবর পেয়ে জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন সেখানে উপস্থিত হয়ে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টার আশ্বাস দেন।
কামরুল পালিয়ে সৌদি আরবে ও পরে গ্রেফতার
মামলার আসামি সৌদি প্রবাসী কামরুলের দেশ ত্যাগে রোববার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তার আগেই সে দেশ থেকে পালিয়েছে। ঘটনার দিন দুপুরে ভাই মুহিত আটকের পরই কামরুল সিলেট থেকে ঢাকা পৌঁছে। সেখান থেকে পরে বিমানে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। এদিকে, সৌদি আরবের জেদ্দায় গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল ৪ টায় কামরুলকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেদ্দার  বাংলাদেশ মিশনের একজন কর্মকর্তা সৌদি পুলিশের সহায়তায় কামরুলকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘জেদ্দা সফররত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এখানে পৌঁছেই কামরুলকে গ্রেফতারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। শেষ পর্যন্ত কামরুলকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। সাবেক সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সউদ আল ফয়সলের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে জেদ্দা সফর করছেন। সূত্র মতে, রাজনের লাশ গুম করতে গিয়ে মুহিত আটক হলে নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে এই ঘটনায় জড়িতরা। তারা যে যেভাবে যেখানে পারে পালিয়ে যায়। একই সাথে কামরুলের অপর ৬ ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও পলাতক। কামরুলের বাড়িতে মহিলা ছাড়া এখন কেউ নেই।
জড়িত ৫ ভাইর নামে পোস্টার
শেখ সামিউল আলম রাজনকে হত্যায় মুহিত ও কামরুল ছাড়াও তাদের আরও ৩ ভাইয়ের নাম এসেছে। তারা হল আলী হায়দার ওরফে আলী, শামীম ও ইউসুফ। এরা সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে। এর মধ্যে কামরুলকেই ভিডিও চিত্রে নির্যাতনের লোমহর্ষক ভূমিকায় দেখা গেছে। বাকি ভাইদের অভিযুক্ত করে পোস্টার সেঁটেছেন বাদেয়ালী জালালাবাদ থানার সর্বস্তরের মানুষ। পোস্টারেই মুহিত-কামরুলের অপর ভাইদের নাম এসেছে। সূত্র জানিয়েছে, মুহিতরা ৭ ভাই।
নিহত রাজনের শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন
অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশু সামিউল আলম রাজনের মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে। একই সঙ্গে তার শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। রাজনের লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাসমিনা ইসলাম। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল দুপুরে পুলিশের হাতে পৌছায়।  ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার পরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে কিশোর রাজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন
রাজন হত্যায় জড়িত সকল খুনিদের বিচারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবের সামনে দুপুরে সর্বস্তরের প্রতিবাদী সকল সিলেটবাসীকে নিয়ে এক মানববন্ধন আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top