সকল মেনু

জলজট-যানজটে নাকাল নগরজীবন

1_277359

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১১ জুলাই : রাজধানীর উত্তরখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের উদ্দেশে অসুস্থ মাকে নিয়ে গতকাল সকাল আটটায় যাত্রা শুরু করেন দুলাল হোসেন। আগের দিনের বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলজটে বাসা থেকে রাস্তায় নেমেই বিপাকে পড়েন তিনি। রিকশা না পেয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে হাঁটুজল ঠেলে মূল রাস্তায় ওঠেন। প্রায় পৌনে একঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চড়ামূল্যের ভাড়ায় একটি সিএনজিতে চড়েন। এই সময়ের মধ্যে কোনো ট্যাক্সি কিংবা বাসও পাননি। ছুটির দিনে সকাল সোয়া ৯টায় যাত্রা করে ঢামেক হাসপাতালে পৌঁছাতে তার সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা।কারন জলজট ওযানজট। পল্লবীর কালশীতে আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য সকাল ১০টায় ধানমন্ডির বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হন বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম। কোথাও হাঁটুজল, কোথাও গিরার উপরে জল ঠেলে তিনি কালশীতে পৌঁছার আগেই গাড়ির ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে তা বিকল হয়ে যায়। সবশেষে আত্মীয়ের বাসায় তিনি যখন পৌঁছেন ততক্ষণে পানির কারণে তার গাড়ি নষ্ট, কাদায় জুতা ময়লা এবং কোমরপানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টির পানিতে কাকভেজা হয়ে গেছেন। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বৃষ্টির কারণে সড়কজুড়ে সৃষ্ট জলজটে দুলাল ও সাইফুলের মতো বিপাকে পড়েন রাজধানীবাসী। ঈদের কেনাকাটা, ট্রেন-বাসের টিকিট কিনতে বের হওয়া মানুষের চাপ এবং জলজটের কারণে গতকাল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নগরজীবন। ছুটির দিন শুক্রবারে অনেকে যেমনি কেনাকাটা করার জন্য ঘরের বাইরে পরিকল্পনামত বের হতে পারেননি, তেমনি ঘরের বাইরে নামা মানুষও সময়মতো কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে পারেননি। এদিকে রমজানে জুম্মায় অধিকাংশ মুসল্লিরই ঠাঁই মেলে না মসজিদের মূল ভবনে। তাই মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় নামাজের জায়গা তৈরি করা হয়। গতকাল রাস্তাগুলোতে পানি জমে থাকায় সেই ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে অনেক মুসল্লিকেই জুম্মার নামাজ আদায় না করেই বাড়ি ফিরতে হয়। আবহাওয়া অফিস জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ঢাকা শহরে ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সকালে টানা তিনঘণ্টায় ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে ঢাকায় এ পরিমাণ বৃষ্টি বেশি নয়; একদিনে সবচেয়ে বেশি ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। ২০০৯ সালের ২৮ জুলাই রাজধানীতে ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। শহরের দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এবং প্রাকৃতিক জলাধারগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় এ জলজট-জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ থেকে রোকেয়া সরণীতে শত-শত গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। মিরপুরের ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটের ১৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। বিকালে বৃষ্টি থামলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জলজট তৈরি হয় নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি মার্কেট এলাকা, কাওরানবাজার, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, আজিমপুর, কাফরুল, মৌচাক, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, বনানী, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, খিলক্ষেত, উত্তরা, কুড়িল কুড়াইত আলী রোড, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, চাঁদনিঘাট, পূর্ব ধোলাইরপাড়, জুরাইন, পোস্তগোলা, ফরিদাবাদ, ধলপুর, মানিকনগর, গোপীবাগ, মুগদা, বাসাবো, মাদারটেক, কলাবাগান, ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়কে ও গলিতে। সড়ক-সিগন্যালগুলোতে গাড়িগুলোকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেককে সড়কেই ইফতার সারতে হয়। এদিকে বৃষ্টি, জলজট ও যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীর জন্য ‘গোদের উপর বিষফোড়া’ হয়ে দেখা দেয় রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধিতে। নারী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, শহরে জলজট ও জলাবদ্ধতার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের নদী-খালগুলো বেদখল এবং আংশিক ভরাট করা, নদীগুলোর ঢালে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখা, পুকুর ও নর্দমাগুলো আবর্জনায় ভরাট কিংবা বিলুপ্তি, অপ্রতুল পানি নিষ্কাশন পাম্প, ড্রেনেজগুলোর বর্জ্য নিয়মিত অপসারণ না করা, বক্স কালভার্টগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতা এবং বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলাবদ্ধতা ও জলজটের কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ও তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে সচেতনও। নগরসেবায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিতভাবে সমস্যা-সংকটগুলো সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জলজট-জলাবদ্ধতাও নিরসন হবে না।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top