মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ১০ জুলাই:  উজানের ঢলে তিস্তা অববাহিকায় বন্যা হলেও নীলফামারীর বিভিন্ন স্থানে বর্ষাতেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকারা। ফলে এখানকার চাষিরা আগামজাতের পাট কেটে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। এমনিতে জেলায় পাটের আবাদ কমেছে। প্রতিবছর এই পাট অবাদের পরিমাণ কমছে। ফলে এখানকার কৃষক সোনালী আঁশ নিয়ে আর সোনালী স্বপ্ন দেখেন না। শুধুমাত্র জ্বালানি হিসাবে পাটখড়ি ব্যবহারের প্রয়োজনে পাটের আবাদ করছেন।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে কম পাট আবাদ করা হয়েছে সৈয়দপুরে। পাট চাষের অর্জিত লক্ষমাত্রা হচ্ছে ডোমারে ২ হাজার ৫২৫ হেক্টর, ডিমলায় ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর, জলঢাকায় ২ হাজার ২৭৫ হেক্টর, কিশোরীগঞ্জে ৯৯৫ হেক্টর, নীলফামারী সদরে ৩ হাজার ৮১০ হেক্টর এবং সৈয়দপুর উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর। দেশি জাতের পাট রয়েছে ১ হাজার ৮৯০ হেক্টরে এবং তোষা জাতের ৯ হাজার ৫৩৫ হেক্টর সহ মোট ১১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে চলতি বছরে পাটের আবাদ করা হয়েছে।
গোটা জেলায় গেল বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। কারণ হিসাবে কৃষকরা জানায়, সোনালী আঁশ বাজারজাতকরণে ও পাট জাগ দিতে পানি সমস্যা এবং দাম না পাওয়া প্রভৃতি কারণে পাটের আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া পাটজাত পণ্য ব্যবহার না হওয়ায় চাহিদাও কমেছে পাটের। শুধুমাত্র জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের জন্য সামান্য কিছু জমিতে কৃষকরা পাটের চাষ করেছেন। কৃষকরা বর্তমানে বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান, ভুট্টা, মরিচ, পটল, ঢেঁড়স, করলা, বরবটি, সবজি ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে এক চিলতে জমিতে পাট বুনেছেন। পরিচর্যায় লকলকিয়ে বেড়ে উঠা আগামজাতের পাট কাটছেন কৃষকরা কিন্ত পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় পাট কেটে পাটের আঁটি যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। কেউবা সামান্য পানিতে পাট জাগ দিয়ে চরম বিড়ম্বণায় পড়েছেন। ভরা বর্ষাতেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদী- নালা, খাল-বিলে পাট জাগের প্রয়োজনীয় পানি নেই। পাটের দামের কৃষকের স্বচ্ছলতা নির্ভর করলেও এখানকার কৃষকরা প্রতিবছর পাট জাগ দেয়া নিয়ে পানির সমস্যা আর দাম না পাওয়ায় সোনালী আঁশ নিয়ে আর স্বপ্ন বুনছেন না।