সকল মেনু

১০ বছর পরও টেংরাটিলায় গ্যাসের বুদবুদ বের হচ্ছে

DSC00003

নিজস্ব প্রতিবেদক-সুনামগঞ্জ, হটনিউজ২৪বিডি.কম ০৯ জুলাই : দুর্ঘটনার ১০ বছর পরও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার  টেংরাটিলা পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ডের আশপাশের এলাকা, বাড়িঘর ও টিউবওয়েল দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে। টেংরাটিলা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ও গ্যাসফিল্ডের পাশের গ্রামের বিভিন্ন পুকুর, জমি, রাস্তা ও বাড়ি-ঘরের ফাটল দিয়েও বুদবুদ আকারে গ্যাস বেরোয় এখনও। এতে টেংরাটিলা গ্রামের মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। বৃহস্পতিবার(২ জুলাই) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ামের(বাপেক্স)ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান ও ডিজিএম অহিদুল ইসলাম টেংরাটিলা পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র ও গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিন টেংরাটিলা গিয়ে দেখা যায়, রশিদ আলীর বাড়ির টিউবওয়েল দিয়ে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে। টিউবওয়েল দিয়ে যেমন নিচে পানি পড়ছে, তেমনি ওপর দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। বের হওয়া এ গ্যাসে আগুন দিলে তা দাউদাউ করে জ্বলছে। একইভাবে গ্রামের বাবর আলীর বাড়ির উঠানের বিভিন্ন ফাটল দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে।বাবর আলী জানান, তার নিজ বাড়িসহ গ্রামের প্রায় সব বাড়িরই বিভিন্ন ফাটল দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার কারণে গাছের পাতা ঝরে কাণ্ড শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গ্রামের লিটন মিয়া, নোয়াব আলী ও আব্দুল বাছেতেরও একই বক্তব্য। এ গ্রামের রোকেয়া বেগম জানান, রাতে বসতঘরের দরজা বন্ধ করলে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তাই বাধ্য হয়ে ঘরের জানালা খুলে ঘুমাতে হয়। এদিকে, গ্রামের বিভিন্ন পুকুরে ছোট ছোট পাইপ ফেলে এবং উঠানে পুঁতে রান্নার কাজে অপরিকল্পিতভাবে উদগীরিত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এ গ্যাসকে গ্রামের লোকজন কাসেমগ্যাস বলে অবিহিত করেছেন। কারণ গ্রামের কাসেম আলী প্রথমে এ গ্যাসের ব্যবহার করেন। টেংরাটিলা রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আজিম উদ্দিন জানান, গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ির উঠানে ও পুকুরে ছোট ছোট প্লাস্টিকের পাইপ পুঁতে রেখে রান্নার চুলায় গ্যাস ব্যবহার করছে। তিনি আরও জানান, টেংরাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা ও জমির বিভিন্ন ফাটল দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সাইফুল ইসলাম বলেন, সচেতনতার জন্য গ্যাস ফিল্ডের এলাকায় সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস ব্যবহারের বিষয়ে বাপেক্স বা জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে। ইউএনও আরও জানান, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জনসচেতনতার জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। ৩০ মে শনিবার গ্রামের ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে মুক্তার হোসেন সিগারেট নিয়ে টয়লেটে গেলে সিগারেট থেকে আগুন ধরে দগ্ধ হন। এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে এমনভাবে বুদবুদ বেড়ে গেলে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম পরিত্যক্ত গ্যাস ক্ষেত্রটি পরিদর্শন করেন। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দু’দফা বিস্ফোরণে গ্যাসফিল্ডের উৎপাদন কূপের রিগ ভেঙে প্রচণ্ড গর্জন এবং ভয়াবহ কম্পনসহ ২০০  থেকে ৩০০ ফুট পর্যন্ত আগুন ওঠা-নামা করতে থাকে।
দুই দফা বিস্ফোরণে গ্যাসফিল্ডের মাটির ওপরে ৩ বিলিয়ন কিউবিক ফিট (বিসিএফ) গ্যাস পুড়ে যাওয়া এবং ৫.৮৯ থেকে কমপক্ষে ৫২ বিসিএফ গ্যাসের রিজার্ভ ধ্বংস হওয়াসহ আশপাশের টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরীশনগর, কৈয়াজুরি ও শান্তিপুরের মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও পরিবেশের ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের পর আশপাশের মানুষের সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে কিছুদিন পরই নাইকো তাদের সরঞ্জামাদি নিয়ে গ্যাসক্ষেত্র থেকে চলে যায়।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top