সকল মেনু

এখন গ্রিস সংকটের ঢেউ বাংলাদেশে!

greece1436190477 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম: উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ঋণখেলাপী দেশ এখন গ্রিস। দেশটির চলমান অর্থনৈতিক এই সংকটের নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও গ্রিস সংকটের এই প্রভাব প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, গ্রিসে বাংলাদেশি প্রবাসীদের শুধু কর্মসংস্থান হারানো বা প্রবাসী আয় কমারই ভয় নেই, রয়েছ রপ্তানি আয় কমার পাশাপাশি বহুমাত্রিক সংকট। এতোদিন চিংড়ি, চামড়া, খাদ্যপণ্য ও পাটের সুতা প্রভৃতি পণ্য গ্রিসে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি হতো। দেশটির অর্থনৈতিক এ সংকটের প্রভাব এখন এসব খাতেও পড়বে। এছাড়া গ্রিসের এ সংকট যদি ইউরোপের অন্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করে, তাহলে তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্যও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়াবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্যবিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে গ্রিসে মোট ২ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে এ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে ১ হাজার ৫৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

এদিকে গ্রিস সংকটে তাৎক্ষণিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। গ্রিসে বাংলাদেশিদের পরিচালিত ২৫০টি কারখানার মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন। আসন্ন বিপদে এরই মধ্যে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী গ্রিস ছেড়েছেন। আর যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, শেষ পর্যন্ত তাদের হয়তো দেশেই ফিরে আসতে হতে পারে। এতে কমে যাবে প্রবাসী আয়।

এছাড়া গ্রিস সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং এ সংকটের প্রভাব ইউরোপের অন্য দেশে পড়লে দেশের পোশাক রপ্তানির খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কেননা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশই রপ্তানি হয় ইউরোপের দেশগুলোতে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ-গ্রিস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ডইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও এসিআই সল্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীরের সঙ্গে। তিনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে প্রবাসীরা বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারেন। একইসঙ্গে রপ্তানি পণ্য বিশেষ করে পোশাক শিল্প রপ্তানিকারকরাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’

তবে প্রবাসী-ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

এদিকে গণভোটে গ্রিসের জনগণ ঋণের জন্য দাতাদের দেওয়া কঠোর শর্তাবলী গ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পুঁজিবাজারের সূচকের পতন হয়েছে। তবে চীনের পুঁজিবাজারে রয়েছে উল্টো চিত্র। এছাড়া ইউরোজোনের একক মুদ্রা ইউরোর মানেও প্রভাব ফেলেছে গণভোটের ফল। মার্কিন ডলারের বিপরীতে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ দর কমেছে ইউরোর।

এশিয়ার বৃহৎ পুঁজিবাজারের মধ্যে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এছাড়া টোকিও ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, সিউল ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সিডনি ১ দশমিক ১৮ শতাংশ, ওয়েলিংটনের স্টক মার্কেটে শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

বাংলাদেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেও সূচকের পতন ঘটেছে। ভারতের পুঁজিবাজারেও পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। সোমবার সকালে সেনসেক্স ৩০০ পয়েন্ট নিচে নেমে গেছে।

প্রবাসী আয়, রপ্তানি ও শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবদ সালেহউদ্দিন আহমেদ হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, গ্রিসের সঙ্কট সরাসরি প্রবাসী আয়ে পড়বে। আর এ সংকট দীর্ঘ মেয়াদে হলে রপ্তানিতেও চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

দেশটির এ সংকট যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের জন্য দু:সংবাদ বয়ে আনবে বলে মনে করেন প্রবীন এই অর্থনীতিবদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top