সকল মেনু

সৈয়দপুরে হাঁস পালনে দিলীপ রায়ের পরিবারে স্বচ্ছলতা

unnamed মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী  ০৩ জুলাই: মধ্যবিত্ব পরিবার কিন্ত অভাবটা ছিল সারাবছর। ফলে সংসার নামের চাকাটা ঘুরাতে দারুণ কষ্ট হত দিলীপ রায়ের। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ জোটাতে প্রতিদিন একটা আয়ের কথা চিন্তা করতে লাগলেন। অবশেষে শুভাকংখীদের পরামর্শে ও টিভিতে প্রামাণ্য চিত্র দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন হাঁস পালন। যেহেতু বাড়ির পাশে নদী-নালা আর আর পুকুর আছে। এ কারণে হাঁস পালনে তার খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। আর এই হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিলীপ রায় (৪০)। সংসারের অভাব-অনটনও ঘুচেছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সন্নিকটে বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার মাষ্টারপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে পুকুরে ও ক্ষেতেÑখামারে প্রায় সাড়ে ৩শ’ হাঁস সাঁতরে বেড়াচ্ছে। চোথে না দেখলে বিশ্বাস হয়না, এ এক অনবদ্য ও হাঁসের জলকেলি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এই সাড়ে ৩শ’ হাঁস গড়ে প্রতিদিন ২শ’ উপরে ডিম পাড়ে। দিলীপ রায়ের বাড়ি থেকে পাইকার বা ডিম ব্যবসায়ীরা বাজারদরে ডিম নিয়ে যায় প্রতিদিন।
এসব হাঁস ডিম দেয়া শুরু করে চলে টানা ১১ মাস। তবে দিলীপ রায় মাত্র ৭/৮ মাস ডিম নিয়ে পরবর্তীতে হাঁস বিক্রি করে দেন পার্টির কাছে প্রতিটি ৪শ’ টাকায়। তারা আবার এসব লালন-পালন করে ডিম নেয়ার পর বাজারে বিক্রি করে দেন। তিনি এসব হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করেছেন সান্তাহার ফার্ম থেকে। এটি চায়না জাতের ‘জেনডিং’ হাঁস যাকে স্থানীয়ভাবে সবাই জিগনি নামে চেনে। প্রতিটির দাম পড়েছে ৩৫ টাকা করে। এই জাতের হাঁস দ্রুত বাড়ে, খাদ্য চাহিদা কম এবং পরিবেশের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেয়।  এই জাতের পুরুষ হাঁস অনেকটা কালো এবং গলায় চিকচিকে সবুজ আর নারী হাঁস ধুসর রংয়ে পুরো শরীরে কালো সিট আছে। এসব হাঁস দেশি হাঁস থেকে সহজে আলাদা করা যায়।
প্রায় ৯ বছর ধরে এই হাঁস পালন করে সংসারের স্বচ্ছলতা এনেছেন দিলীপ রায়। হাঁস পালনের সাড়ে চার থেকে ৫ মাসের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে। প্রতিদিন গড়ে ২শ’ ডিম প্রতিটি ৭/৮ টাকায় বিক্রি করে ১ হাজার ৬শ’ টাকা আয় করেন। প্রতিদিন ডিম বেচে হাঁসের খাদ্য গম, ভুট্টা, সয়াবিন, প্রোটিন, খৈল, শামুক, ধানের গুড়া ইত্যাদি ৫শ’ টাকায় সংগ্রহ করেন আর হাঁস দেখভাল করার জন্য রেখেছেন শরৎ (৪৫) নামে একজন কে। তাকে দিতে হয় সারাদিনে ২শ’ টাকা। মাঝে মধ্যে হাঁসের ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় করে প্রতিদিন তার নেট মুনাফা থাকে ৮ থেকে ৯শ’ টাকা। এই টাকায় ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া আর বাকি টাকা সংসারে লাগান বলে জানান তিনি।
দিলীপ রায়ের স্ত্রী মুক্তা রায় (৩৫), এক মেয়ে এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ছেন ছোট ছেলে সৈয়দপুরের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ২য় বর্ষের ছাত্র। পৈত্রিক সূত্রে দিলীপ রায় পেয়েছেন মাত্র দেড় বিঘা জমি। এই জমি হালচাষ করে সংসার না চলায় বর্তমানে হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়েছেন। হাঁস রাখার জন্য বাঁশের মাচাং-এর ঘর  তৈরি করেছেন পানির উপরেই ৩০ হাজার টাকায়। সকাল ৮টায় হাঁস বের করে দেযার সাথে সাথে দেখভাল করার লোক শরৎ হাঁসগুলোর সাথে থাকেন। সারাদিন নদী-পুকুরে হাঁসগুলো সাঁতরে বেড়ায় আর ক্ষেতেÑখামারে ঠুকে ঠুকে খাদ্য সংগ্রহ করে। দিনশেষে এগুলো ফিরে এলে দিলীপ রায় ও তার পরিবার খাবার দেন।
সৈয়দপুর- পার্বতীপুর সড়কের পাশে কদমতলীতে এই হাঁসের খামার পথচারীদের মুগ্ধ করে। দেখতে আসেন পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাও। তার দেখদেখিতে এলাকার বেশ কয়েকজন হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে এ কাজে নেমে পড়েছেন। হাঁস পালন করতে গিয়ে প্রানী সম্পদ বিভাগের পরামর্শ ও সরকারি-বেসরকারি কোন সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেন দিলীপ রায়। তবুও বসে থাকেননি দিলীপ রায়। নিজের শ্রম ও পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। যা তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে।
দিলীপ রায়ের স্ত্রী মুক্তা রায় জানান, হাঁস পালনে প্রতিদিন দুটো পয়সার মুখ দেখা যায়। ডিম ও হাঁস বিক্রি করার পাশাপাশি হাঁসের বিষ্টাও বিক্রি হয়ে থাকে। হাঁসের ঘর পরিস্কার করার পর বিষ্টা নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। এসব বিষ্টা নিজের জমিতে সার হিসাবে ব্যবহার করেন। কেউ কেউ মাছের খাদ্য ও জমিতে ব্যবহারের জন্য প্রতিবস্তা (২৫ কেজি) ৫০/৬০ টাকায় কিনে নিয়ে যান। এতে আরও কিছু বাড়তি আয় আসে।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম বাংলা নিউজকে জানান, দিলীপ রায়ের অভিযোগ সত্য নয়। কারণ প্রতি ২/৩ মাস অন্তর এই প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে নামমাত্র মূল্যে তাকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে। হাঁস পালন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই খামার গড়ে তুলেছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top