সকল মেনু

ঈদ সামনে : অজ্ঞান পার্টি বেপরোয়া

5ee2767785e88bb155b86aa8182f0425-55

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৮জুন:  রাজধানীতে আনাগোনা বেড়ে গেছে মৌসুমি অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের। ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারের মতই এবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। তাদের ফাঁদে পড়ে স্বর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমনকি, তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরাও। যাত্রীবাহী বাস লঞ্চ ফেরিতে এবং  রাস্তাঘাটে হকার কিংবা সহযাত্রী-বন্ধু সেজে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে এই অজ্ঞান পার্টির লোকরা । সাধারণত ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার সুযোগটিকেই কাজে লাগায় এরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়িয়ে খুব সহজেই এরা ওইসব ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষদের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। গত ১৭ জুন রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে  ৪ লাখ টাকা খুইয়েছেন লিটন নামে এক ব্যক্তি। তিনি মতিঝিলের ইউনূস সেন্টারে অবস্থিত সেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির অফিস সহকারি।
এর আগে গত ১ জুন রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে এনায়েত উল্লাহ নামের ভারতীয় এক নাগরিককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২৭ মে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ লাখ টাকা হারান দুই ব্যবসায়ী। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দুই ব্যবসায়ী হলেন মো. মহিউদ্দিন (২৮) ও হারুনুর রশিদ (৩০)। তাদের ২ জনেরই নরসিংদী সদরে কাপড়ের দোকান রয়েছে। ওই ২ ব্যবসায়ীর বন্ধু অনীক জানান, তারা ৩ জন নরসিংদী থেকে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় এসেছিলেন দোকানের মালামাল কিনতে। যাত্রাবাড়ী আসার পর হকারের কাছ থেকে হালুয়া কিনে খান মহিউদ্দিন ও হারুন। এটা খেয়েই হয়তো তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ২৪ মে রাজধানীর মহাখালীতে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান রকিবুজ্জামান নামের এক পুলিশ সদস্য। গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে আকবর আলী (৪৫) নামের এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতের ভাই ফজলুল হক জানান, আকবর নরসিংদী পলাশ জুট মিলে চাকরি করতেন। তাদের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। তাদের বাড়ি থেকে নরসিংদী যাওয়ার পথে ট্রেনের মধ্যে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন আকবর। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবরের মৃত্যু হয়। এভাবেই প্রতিনিয়ত অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের কবলে পড়ে কেউ সর্বস্ব হারাচ্ছেন আবার কারো জীবনও বিপন্ন হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, অজ্ঞান পার্টির এই দুর্বৃত্তরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই বেরিয়ে এসে আবারও এ অপকর্মে যুক্ত হয়। কেউ বা আবার আদালত থেকেই জামিনে বেরিয়ে এসে একই কাজ করে। রাজধানীবাসীকে অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান থাকার  আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, গরমে অনেকে ফুটপাত বা রাস্তার ধারে ডাব, শসা, ক্ষীরা, গাজর, তরমুজ, লেবু, ফলের শরবতসহ নানা ধরনের পানীয় খাচ্ছেন। এই সুযোগে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কৌশলে খাবার ও পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, পাইকারি বাজার ও বিপণিবিতানগুলোতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপর রয়েছে। তাই গরমে বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করুন। এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও ফেরিঘাট, রেলওয়ে স্টেশন এবং  শপিংমলসহ অন্তত ৪০টি পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির প্রায় শতাধিক গ্রুপ কাজ করছে। এরা প্রতিটি গ্রুপে ৪-৫ জন কাজ করে। প্রথমে তারা ২-১ জনকে টার্গেট করে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে সংকেত পেলে অন্যজন খাদ্যদ্রব্য বিক্রির উছিলায় তাদের কাছে যায়।এরপর কৌশলে টার্গেট-ব্যক্তিকে চেতনানাশক মেশানো খাবার খাইয়ে তার কাছ থেকে টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. খাজা গফুর বলেন, ‘অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অচেতন করতে বেশি ব্যবহার করে এপিট্রা নামে একটি তরল ওষুধ ও নকটিন ট্যাবলেট। এ ছাড়া ঘুমের ওষুধ এটিভেন, মাইলাম, ডরমিকাম এবং ধুতরা জাতীয় বনজ দ্রব্য ব্যবহার করে। এক ফোঁটা এপিট্রা মেশানো খাবার খেলে ৫-১০ মিনিটের মধ্যে ঘুম চলে আসে। আবার অতিরিক্ত খেলে এই ঘুম ২ থেকে ৩ দিনেরও বেশি দীর্ঘ হতে পারে। এ ছাড়া শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি অতিরিক্ত সেবনে মারাও যেতে পারেন।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া)এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধর্মীয় ও জাতীয় বিভিন্ন ধরনের বড় উৎসব-অনুষ্ঠান এলেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যেই অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যদের আমরা ধরেছি। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এ ধরনের প্রতারক চক্রকে  ধরতে মাঠে নেমেছে।’
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top