সংসদ প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগকে বারবার নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ তার আদর্শ নিয়ে দেশ সেবা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে দশম জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এ কথা বলেন। এ আলোচনায় আরো অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের সেবা করার জন্য আওয়ামী লীগের জন্ম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৪’র আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলনের পরে ৭১’র স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শত প্রতিকূলতার মধ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষায় গড়া এ দলটি। আওয়ামী লীগ ত্যাগ তিতিক্ষা করেছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। যা রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা আবারো প্রমাণ করল একটু সুযোগ পেলেই সব করতে পারে।’

আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ উজানে নৌকা ঠেলে ঠেলেই এগিয়ে যাচ্ছে। আদর্শে গড়া দলকে কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারে না, পারবে না বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ  হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুরো ইতিহাস বাঙালি জাতির ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত। দেশের স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস রয়েছে আওয়ামী লীগের। ত্যাগের কারণেই দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। শুরু থেকেই দেশের প্রতিটি মানুষ আওয়ামী লীগের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।’ এ জন্য তিনি দেশের প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ জানান।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হওয়ার ৬ মাস আগে তাকে (বঙ্গবন্ধু) কোথায় রেখেছিল তা আমরা পরিবারের কেউ জানতাম না। বঙ্গবন্ধুর আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার। স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বে আত্মমর্যাদা লাভ করবে- এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। স্বাধীনতার পর মাত্র দেড় বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান দিয়েছেন তার মতো এত সুন্দর আর বিশ্বের কোথাও নেই। দেশ গঠন এবং জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার সব কাজ বঙ্গবন্ধু করেছেন। সমুদ্রসীমা, স্থল সীমানা সব আইন বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছেন। সেগুলো শুধু বাস্তবায়ন বাদ ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি একমাত্র বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ নিধন শুরু হয়। যেমনটি ১৯৭১ সালে শুরু করেছিল ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ৭৫’ পরবর্তী যারা ক্ষমতায় আসে তারাও সেভাবেই আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। আদর্শের ওপর যে রাজনীতির দল গড়ে উঠে, সে দলকে শেষ করা এত সহজ না। আওয়ামী লীগ একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে ওঠা দল। এ দলকে এত সহজে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ বুঝতে পারে সরকার মানে সেবক। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার আমল ছিল স্বর্ণযুগ। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আবার আঘাত আসে।’

তিনি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন, যে জাতি আত্মমর্যাদায় নির্ভরশীল হয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, সে জাতির ত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ  ত্যাগের প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সেই ত্যাগ করেছে, ত্যাগ করেছে বলেই বাংলাদেশের সকল অর্জন আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই এসেছে। শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। জনগণ কখনো বিভ্রান্ত হয়নি। জনগণ আওয়ামী লীগের পাশেই ছিল। জনগণ আওয়ামী লীগকে যে দায়িত্ব দিয়েছে আমরা তা আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে, কেউ সফল হয়নি। আগামীতেও কেউ সফল হবে না।’

সংসদ নেতা আরো বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঠাট্টা করেছে তারাই এখন বলছে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, পিছিয়ে থাকতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট খেলায় এভাবে জয়ী হচ্ছে, তা অনুসরণীয়। বিশ্বকাপ জয়ী দলকে হারাতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা। রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা আবারো প্রমাণ করেছে বাঙালি একটু সুযোগ পেলে সব করতে পারে।’