সকল মেনু

৪ জুন নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস

uvs130603-003 ৪ জুন নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম দিকে লেঙ্গুরিয়া অবাঙ্গালিদের সাথে বাঙ্গালীদের মধ্যে এক রায়টে বেশকিছু অবাঙ্গালি মারা যায়। ঐসব অবাঙ্গালি হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল ছাতনী এলাকার মানুষজন এমন বিশ্বাস থেকেই লেঙ্গুরিয়ার অবাঙ্গালিরা প্রতিশোধের নেশায় মেতে ওঠে। এছাড়া নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ছাতনী গ্রামে হওয়ায় অবাঙ্গালীদের আক্রোশের মাত্রাও বেড়ে যায়। পাক সেনাদের দোসর স্থানীয় শান্তিকমিটির সহায়তায় নাটোরের হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী, সান্তাহার এবং সৈয়দপুর থেকে আসা অবাঙ্গালীদের সাথে নিয়ে পাক সেনারা ৪ জুন রাত আড়াইটার দিকে ছাতনীতে অভিযান চালায়। তারা রাতভর আশেপাশের শিবপুর, বারোঘড়িরা, আমহাটি, পন্ডিত গ্রাম, ভাভনি, ভাটপাড়া, হাড়িগাছা, রঘুনাথপুর ও বনবেলঘরিয়া সহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের ধরে এনে ছাতনী স্লুইস গেটের কাছে একটি মাঠে জড়ো করে। এ সময় মহিলাদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এই হত্যাযজ্ঞ এবং বেলা ১১ টার মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। নিরীহ এসব লোকদের হত্যা করতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরণের ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। অর্ধমৃতদের সবাইকেই জবাই করে এবং এসিড ঢেলে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এভাবে তারা নির্বিচারে শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধসহ মোট ৪৬৭ জন মানুষকে নারকীয়ভাবে হত্যা করে। হত্যার পর তাদের লাশ আসেপাশের আবাদী জমি, ডোবা ও খালে গণভাবে কবর দেয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তদানিন্ত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নিজ স্বাক্ষরে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ৫শ’ টাকার চেকসহ কৃতজ্ঞতা পত্র প্রদান করেন। দিনটিকে স্মরণ করে সেখানে ছাতনীর ¯ুইস গেটের কাছে গণহত্যায় প্রথম শহীদ ছাতনীর তৎকালিন ইউপি মেম্বার মনির উদ্দিন সরকারের নিজস্ব জমিতে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা মাত্র সাড়ে ১২শ’ টাকা দিয়ে কয়েক বছর আগে তৈরী করা হয় ছাতনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এবারে সেই শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করা হচ্ছে। শহীদ মিনারে স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা মোট ৬৪ জনের নাম খোদাই করে রাখা হয়েছে। ছাতনীর সেই নারকীয় গণহত্যার হৃদয় বিদারক ঘটনাটি স্বাধীনতার এত বছর পরেও সরকারী স্বীকৃতি না পাওয়া যায়নি। এখনও প্রতি বছর সেই দিনটিকে স্মরণ করে এলাকার লোকজন মিলাদ মাহ্ফিল সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top