সকল মেনু

উত্তরাঞ্চলে আমের ফলন ভাল, ক্রেতা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৭ জুন : রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরা হওয়ায় দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে। ভোক্তাদের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে এ অঞ্চলের আম বেশি দামে বিক্রি হয়ে আসছিল। বিদেশেও যাওয়া শুরু করেছিল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। কিন্তু গত বছর আমে ফরমালিন, দেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে অধিকাংশ ভোক্তা আম খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আমের চাহিদা কমে যায়।
চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আমের ভালো ফলন হয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩২টি আম গাছ থেকে ফলন হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ১৯ লাখ আম গাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আম সংগ্রহ করা হয়েছে। আমচাষিরা বলেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার তারা পাঁচ জুনের আগে গাছ থেকে পাকা আম পাড়তে (সংগ্রহ) পারেননি। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে এবার আম আগাম আম পাকতে শুরু করে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় রাজশাহীর বানেশ্বর, সাহেববাজার, গোদাগাড়ী, মুণ্ডমালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুরাতন বাজার, শিবগঞ্জ কানসাটসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে আমের সরবরাহ বেড়ে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গত বছর আম নিয়ে যাওয়ার পর ঢাকার প্রবেশপথে ফরমালিন আছে বলে ট্রাকের পর ট্রাক আম নষ্ট করলে আম ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ আমের বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখনও আমের মোকাম হিসাবে পরিচিত কানসাট ও বানেশ্বর বাজারে আসেননি। দুই-এক জন ব্যবসায়ী এলেও আমের মোকামে পর্যাপ্ত ক্রেতা নেই। বাজার মন্দার কারণে চলতি মৌসুমে শতকোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আমের বাগান কিনে হারাতে বসেছেন পুঁজি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান বলেন, এ অঞ্চলের আম স্বাদে ও পুষ্টিমানে ভালো হওয়ায় আমে ফরমালিন, কেমিক্যাল ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয় না। দেশ ও বিদেশের একটি চক্র রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এই চক্রটি গত বছর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমে ফরমালিন ও কেমিক্যাল মেশানো রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার  চালায়। পুলিশ ও প্রশাসন ফরমালিনের বিষয়টি অনুসন্ধান না করে ঢালাওভাবে আম নষ্ট করতে থাকে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে বাজারগুলোতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম বিক্রি হচ্ছে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জোরালোভাবে দাবি করেন। গোদাগাড়ীর নসিদানপুর গ্রামের চাষি তাইফুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় মণপ্রতি আমের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কম। গাছে দ্রুত আম পেকে যাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় চাষিরা বাধ্য হয়ে বাকিতে আম বিক্রি করে দিচ্ছে। আমচাষিরা আরো বলেন, মৌসুম শুরুর আগে মে মাসের মাঝামাঝিতে যখন বাগানগুলোতে কিছু কিছু আম পাকতে শুরু করে ঐ সময় রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর আশঙ্কায় গাছ থেকে আম পাড়ার ওপর ২০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে আম পেকে গেলেও গাছ থেকে আম পাড়তে না পারার কারণে অনেক আম নষ্ট হয়ে যায়। নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, আম আবহাওয়ার কারণে আগে বা পরে পাকে। কিন্তু এভাবে প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় চাষিরা পাকা আমও গাছ থেকে পাড়তে পারেনি। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমে রাসায়নিক মিশ্রণ ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। তবে এ জন্য যে, চাষিরা দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এটা ঠিক নয়। বানেশ্বর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আমের মোকামে আমের সরবরাহ বেড়ে চললেও পাইকারি ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা কম আসার কারণে বিক্রি হচ্ছে কম। আশানুরূপ আম বিক্রি করতে না পেরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানীহাটির আমচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু কম দাম পাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top